মাশরুম চাষে সফল উদ্যোক্তা পাপড়ি হাসান
ছত্রাক জাতীয় গাছ মাশরুম, ব্যাঙের ছাতার মতো। মাশরুম ও ব্যাঙের ছাতা দেখতে একই রকম হলেও এদের মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার, কেননা প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া কোন কোন মাশরুম বিষাক্ত হয় এবং সেগুলো খাওয়া যায় না। পৃথিবীতে প্রায় ৩ লাখ প্রজাতির মাশরুম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার প্রজাতি খাওয়ার অযোগ্য। আনুমানিক ১০ হাজার প্রজাতির মাশরুমের ওপর গবেষণা চলছে। এদের ভেতরে মাত্র ১০ প্রজাতির মাশরুম খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
সূর্যের আলোয় প্রাকৃতিকভাবে খুব বেশি মাশরুম জন্মাতে পারে না, তাই প্রাকৃতিক উপায়ে খাবারের জন্য মাশরুম পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে অনেক স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। মাশরুমে যথেষ্ট আঁশ (Fiboc) রয়েছে যা শরীর স্লিম রাখতে সহায়তা করে। দেশের অনেক বিশেষ করে ঢাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম, মধুপুর প্রভৃতি স্থানে এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। মাশরুম চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। মাশরুম চাষ করতে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না।
বাংলাদেশের চাষোপযোগী মাশরুমের জাতগুলো হলো-ঝিনুক মাশরুম দুধ মাশরুম কান মাশরুম বোতাম মাশরুম , তাপ সহনশীল শিতাকি মাশরুম ,খড় মাশরুম মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু পুষ্টি ও ওষুধি সম্পন্ন একটি খাবার এতে প্রচুর পরিমাণ আমিষ ভিটামিন খনিজ লবণ সহ অন্যান্য প্রায় সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
মাশরুমে প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ ভাগ আমিষ থাকে যা প্রাণিজ উৎস। যেমন মাছ মাংস দুধ ডিমের সমতুল্য। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ভিটামিন, খনিজ লবণ সহ অন্যান্য প্রায় সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাছাড়া মাশরুমে বিভিন্ন ধরনের বায়ো অ্যাকটিভ কম্পাউন্ড, এ্যামাইনো অ্যাসিড থাকায় তা বিভিন্ন রোগের জন্য উপকারী ও সুবিদিত। যেমন বাত, ব্যথা, জন্ডিস, কৃমি, রক্ত বন্ধ হওয়ার কাজে, রক্তচাপ কমায় ও সঞ্চালন বৃদ্ধি টিউমার কোষের বিরুদ্ধে কাজ, শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি হয়।
এবং সর্দি, কাশি দূর হয়, উচ্চ রক্তচাপ ও বহুমূত্র রোগের সুফল পাওয়া যায়। তাছাড়া মাশরুম কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে। মাশরুম প্রোটিনের হজম ক্ষমতা শতকরা ৭০-৮০ ভাগ হওয়ায় রোগীদের জন্য সহজ প্যাক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার।। রং বোতলের কর্ক. ছবির ফ্রেম, ফুলদানি হিসেবেও মাশরুম ব্যবহার করা হয়। সারা বিশ্বে মাশরুমে একটি জনপ্রিয় খাবার। আমাদের দেশে এখনো মাশরুম অসাধারণ মানুষের খাদ্য তালিকা আসে নাই। তবে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে।
আমাদের দেশে মাশরুম চাষে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা, তার মধ্যে একটি হলো সারা বছর একই রকম ভাবে মাশরুম চাষ না হওয়া বিশ্বের যে সকল মাশরুম চাষ হয় বেশিরভাগই ঠান্ডা আবহাওয়া আমাদের দেশে মূলত ওয়েস্টার মাশরুম সারা বছর চাষ হয়।
গাজীপুরের টঙ্গীর কলেজ গেইটের আউচপাড়া এলাকার স্পন ও মাশরুম চাষের পরিচালক পাপরি হাসান। তিনি প্রায় ১৩ বছর যাবত এ নিয়ে কাজ করছেন। মিসেস পাপড়ি হাসান, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে এমএসসি কমপ্লিট করার পর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
তবে তিনি এইচ.এস.সি. লেখাপড়াকালীন সময়ে থেকে চাকরি করতেন, তার মতে চাকরি হয়ত দীর্ঘমেয়াদি নাও থাকতে পারে এবং যে যত বড়ই চাকরি করুক না কেন একটা সময় তাকে অবসর নিতেই হবে, ব্যবসা শুরুর দিকে স্বাবলম্বী হওয়া যায় না যার কারণে তিনি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করেন। যখন তিনি মনে করেছেন ব্যবসায় তিনি সাফল্যের মুখ দেখতে পেরেছেন তখন একটি কোম্পানির চিফ এক্সিকিউটিভের চাকরি ছেড়ে ব্যবসার দিকে মনোযোগ দেন।
এখন তিনি পাপড়ি মাশরুম এন্ড এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকার। স্পন, মাশরুম এবং সার বিক্রির পাশাপাশি তিনি উদ্যোক্তাদেরও ট্রেনিং এবং পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি জানান ওয়েস্টার মাশরুম বাংলাদেশে সহজ লভ্য এবং সুস্বাদু, তাছাড়া এ মাশরুম বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায় এবং দামেও তুলনামূলকভাবে কম। তিনি এ ব্যবসা নিজের পুঁজি দিয়েই করছেন। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য বলেন ব্যবসা করতে হলে ধৈর্যচ্যুতি ঘটানো যাবে না, এটা হলে ব্যবসায় সফলতা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বাংলাদেশের প্রায় সব কয়টা জেলাতেই তার কাস্টমার রয়েছে, যারা অনলাইন বা সশরীরে তার ফার্মে থেকে উৎপাদিত সামগ্রী ক্রয় করতে পারে। তাছাড়া মাশরুম চাষের যে উচ্ছিষ্ট টা থাকে তা জৈবিক সার হিসেবে সংরক্ষণ করে বিক্রি করেন। এ সারে, অন্য গাছ বিশেষ করে ছাদ কৃষিতে অনায়াসে রোপণ করা যায়। এটা সার এর পাশাপাশি মাটির কাজ করে বলে জানান মিসেস হাসান।