রাণীনগরে ১০৭ টাকার জমির খাজনা দিতে ঘুষ দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা
কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্যে নাকাল সেবা গ্রহিতারা
নওগাঁর রাণীনগরের সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনার চেয়ে হাজার টাকা দিতে হয় ঘুষ। এমন ঘুষ বাণিজ্যে নাকাল হয়ে পড়েছেন ইউনিয়নের সেবা গ্রহিতারা। বর্তমানে শত শত অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য আর হয়রানীর আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাণীনগর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। অর্থাৎ বর্তমানে উপজেলার সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশির নিয়ম বিরাজমান।
সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোছা. ফাতেমা খাতুন তার ভাই বহিরাগত মামুনের মাধ্যমে অফিসের কম্পিউটারের সকল কাজ সম্পন্ন করে আসছেন এবং মামুন অফিসের নিয়োগপ্রাপ্ত কোন কর্মচারী না হলেও ফাতেমা তার দ্বারাই ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে সকল কাজ চালিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিগত সময়ে এমন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও এখনোও উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও তার বাহিনী।
উপজেলা সদরের মৃত কাজী কাশেম আলীর ছেলে কাজী গোলাম কুদ্দুসকে ১০৭ টাকার ভূমি উন্নয়ন কর দিতে ঘুষ দিতে হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। বর্তমানে ওই ইউনিয়নে এমন বিভিন্ন অনিয়মের শিকার ভুক্তভোগীদের অভাব নেই। কেউ প্রতিবাদ করে আবার কেউ নিরুপাই হয়ে হয়রানীর হাত থেকে বাঁচতে নিরবে ওই মহিলা কর্মকর্তা ও তার বহিরাগত ভাইয়ের ঘুষ বাণিজ্যে সায় দিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই দালালদের সঙ্গে আঁতাত করে জমি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী কাজী গোলাম কুদ্দুস বলেন নিয়মানুসারে যাদের জমি ২৫ বিঘার নিচে তারা খাজনা মৌকুফ চেকের সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেই মোতাবেক আমি উপজেলার গোনা ইউনিয়নের খাজুরিয়া মৌজায় থাকা ৩১শতাংশ জমির খাজনা পরিশোধ করেছি মাত্র ২০টাকায়। কোন দেন দরবার ছাড়াই ওই অফিস আমাকে চলতি মাসের ১আগস্ট ইলেকট্রনিক খাজনা পরিশোধের রশিদ প্রদান করেছেন।
অপরদিকে সদর ইউনিয়নের সোনাকানিয়া মৌজায় থাকা ৩৬শতাংশ জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্যে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে সেখান কর্মকর্তা প্রথমে আমার কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা দাবী করেন। খাজনা মৌকুফের জমির কর দিতে এতোগুলো টাকা কেন লাগবে সেই কথা বলার পর ওই কর্মকর্তা আমার কাছে সব মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা দাবী করেন। এরপর সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই সকালে ওই কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে বলেন বিকেলে এসে খাজনার রশিদ নিয়ে যাবেন। সেই দিন বিকেলে গেলে তিনি একটি খামের মধ্যে করে আমাকে রশিদ প্রদান করেন।
এরপর বাসায় গিয়ে খাম খুলে দেখি ওই কর্মকর্তা আমাকে ১০৭ টাকার খাজনার রশিদ দিয়েছেন। মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা আমাকে জানান, যে আমার জমির বিশ বছরের খাজনা বকেয়া ছিলো। সেই বকেয়া খাজনার সুদে আসলে আড়াই হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। ওই অফিসটি মহিলা কর্মকর্তা তার ভাইয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করেন। ফলে ওনার বহিরাগত ভাই কম্পিউটারের অজুহাতে সেবা গ্রহিতাদের জিম্মি করে এভাবেই ঘুষ বাণিজ্যের নামে গলা কেটে আসছেন। আমার মতো শত শত সেবা গ্রহিতারা ভূমি অফিসে গিয়ে নিরবে বলির পাঠা হয়ে আসছেন অথচ উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তিরা মাসোহারা নিয়ে চুপচাপ থাকছেন আর ঘুষ বাণিজ্যে শিকার হচ্ছি আমরা নিরীহ সেবা গ্রহিতারা। ইউনিয়নবাসীর পক্ষে আমি দ্রুত এমন ঘুষখোর কর্মকর্তার বদলীসহ দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি দাবী করছি।
সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোছা: ফাতেমা খাতুন বলেন ১০৭ টাকার খাজনার রশিদ দিয়ে আড়াই হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি সম্পন্ন মিথ্যে। তাহলে তিনি কয় টাকা নিয়েছেন এই বিষয়েও কোন ব্যাখা দিতে তিনি নারাজ। এছাড়া তার ভাই মামুন কার অনুমতিতে ভূমি অফিসে কম্পিউটারের কাজ করছেন তারও ব্যাখা তিনি না দিয়ে বলেন যে তার প্রয়োজন হয়েছে বলেই তিনি তার ভাইকে অফিসে রেখে কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ করে নিচ্ছেন। এর বাহিরের কোন কথাকে তিনি খোশগল্প করা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো: নওশাদ হাসান বলেন, ইতিমধ্যেই তিনি সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জেনেছেন। দ্রুতই তদন্ত সাপেক্ষে তিনি অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।