রাণী নগর

নওগাঁয় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বত্রিশ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নওগাঁর রাণীনগরের আবাদপুকুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে ৩২ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে গত ৫ আগস্ট গনঅভ্যুত্থানের পর থেকে অধ্যক্ষ লাপাত্তা হওয়ার কারণে জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চললেও ভেঙ্গে পড়েছে কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম। দ্রুত ভুক্তভোগীরা তাদের প্রদেয় ঘুষের বত্রিশ লক্ষ তিরানব্বই হাজার টাকা ফেরত পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগকারী কলেজের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো: আইয়ুব আলীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায় যে, আবাদপুকুর মহাবিদ্যালয়ে ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ের চাকরী প্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ জিএম মাসুদ রানা জুয়েল ও সদ্য বিদায়ী সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাবলু। আওয়ামীলীগের এই দুইজন প্রভাবশালী নেতা মিলে গত ২৪ বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের নিয়োগ ও কলেজ ফান্ডের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার কোন কোন প্রার্থীকে ভুয়া নিয়োগপত্র ও যোগদান পত্র প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন মামাতো ও ফুফাতো এই দুইজন ব্যক্তি।

Image

আবার কোন কোন পদে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে আগের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নতুন করে বেশি অর্থ নিয়ে চাকরী প্রদান করেছেন। ডিগ্রি পর্যায়েও একই অবস্থা। কলেজের প্রভাষক আইয়ুব আলীর কাছ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার, শ্রী নিরাঞ্জন কুমারের কাছ থেকে ৪০ হাজার, জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ১৬ হাজার, মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ৫ লক্ষ, রশিদুল ইসলামের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার, আবু তারেক সরদারের কাছ থেকে ৫০ হাজার, প্রদর্শক এমদাদুল আলমের কাছ থেকে ১ লক্ষ ১০ হাজার, তপন কুমার মহন্তের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার, হিরেন্দ্রনাথের কাছ থেকে ৩৭ হাজার, মঞ্জুরুল হকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও অফিস সহকারী হামিদুল ইসলামের কাছ থেকে কলেজের জন্য ১০ শতাংশ জমি গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া ডিগ্রি পর্যায়ে প্রভাষক মাহবুবের কাছ থেকে ৪ লক্ষ, আনোয়ারুল হকের কাছ থেকে ৩ লক্ষ, রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ৪ লক্ষ, শের এ গোলামের কাছ থেকে ৩ লক্ষ, প্রার্থনাথের কাছ থেকে ২লক্ষ ও আবু সাইদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। এছাড়া এনটিআরসি কর্তৃক যে সকল শিক্ষক কলেজে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কলেজের ফান্ডের কথা বলে অধ্যক্ষ লাখ লাখ টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন।

Image

অভিযোগকারী প্রভাষক মো: আইয়ুব আলী বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এই দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলা যায়নি। আমরা ভুক্তভোগী সবাই অসহায় মানুষ তাই আমাদের প্রদেয় টাকা দ্রুত ফেরতের আশা বুকে নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা আশাবাদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত অভিযোগের ভিত্তিতে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করবেন এবং এমন দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন।

অধ্যক্ষ কি এম মাসুদ রানা জুয়েল মোবাইল ফোনে বলেন, আমি ৫ আগস্টের আগে ঢাকায় গিয়ে আটকা পড়েছিলাম। সবেমাত্র এলাকায় এসেছি দ্রুতই কলেজে যাবো। আর কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের লোকজন প্রার্থী নিয়োগে আর্থিক লেনদেন করে থাকতে পারেন। আর একটি কলেজের অধ্যক্ষই সবকিছু নয়। আর সেই সময় যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছিলো তাদের মধ্যে অনেককেই কিছু না কিছু টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় করতেই বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে কলেজের কিছু শিক্ষক। দ্রুতই আমি অভিযোগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সমস্যার সমাধান করার চেস্টা করবো।

Image

সদ্য বিদায়ী সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মোবাইল ফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি সম্পন্ন মিথ্যে। আমি আর্থিক বিষয়টি কখনোও নিয়ন্ত্রন করিনি। যাবতীয় আর্থিক বিষয়টি অধ্যক্ষ নিজেই নিয়ন্ত্রন করেছেন। তবে ডিগ্রি পর্যায়ে কিছু অর্থের বিনিময় হয়েছে যা কলেজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যয় করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাইমেনা শারমীন বলেন, এমন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Author

দ্বারা
মো: খালেদ বিন ফিরোজ নওগাঁ প্রতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker