কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বুধবার (৯ আগস্ট) উপকূলীয় অঞ্চল পেকুয়া উপজেলায় এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে বেশ কিছু জনবসতি। এর আগে মঙ্গলবার রাতের পর থেকে চকরিয়া উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় বন্যার পানি কমেছে।
একই সঙ্গে চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় পাঁচটি ইউনিয়নে নতুন করে বন্যার পানি ঢুকেছে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশের মহাসড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় এখনও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মাতামুহুরী নদীর কমপক্ষে ১৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এসব ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মাতামুহুরী নদীর অববাহিকা এলাকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নেই বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে এসব এলাকায় এখনও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। তবে মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি কমলেও এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে গত তিন দিনে পাহাড়ধস, পানিতে ভেসে এবং সাপের কামড়ে চকরিয়া পেকুয়া রামু এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাতজন মারা গেছে। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ধসকবলিত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই দুই উপজেলায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আরও জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার সব ইউনিয়ন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় ৫০ হাজার টন চাল এবং সাত লাখ টাকা নগদ সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুর্গত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন নৌবাহিনী কোস্টগার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বরইতলী, হারবাং, পুর্ববড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড়ো ভেওলা, চিরিঙ্গা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, ফাসিয়াখালী বদরখালী ঢেমুশিয়া কোনাখালী, চকরিয়া পৌরসভা, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
উপকূলীয় এলাকার পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন স্লুইস গেইট এবং নির্মাণাধীন রেললাইনে পর্যাপ্ত কালভার্ট না থাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা কর্মকর্তা জামাল মোর্শেদ জানান, মাতামুহুরী নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানির তোড়ে কইন্যারকুম, বিএমচর, মেহেরনামা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া আরও একাধিক এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.