খেলাধুলা

রোমাঞ্চিত অভিযাত্রী ট্রাভিস হেড

মোহাম্মদ সিরাজকে তুলে মেরেছিলেন ট্রাভিস হেড। ওটা হতে পারত ২০২৩ বিশ্বকাপে মাঠের শেষ ‘অ্যাকশন’। ফাইনালের গতি-প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়েও যেত দারুণ। কিন্তু হেডের শট উচ্চতা পায়নি, সোজা গিয়ে জমা পড়ে ডিপ মিড উইকেট ফিল্ডারের হাতে।

কোথাও কোনো উদযাপন নেই। শিরোপার ভাগ্য যে ততক্ষণে গড়া হয়ে গেছে, জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া। তাই মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছেন হেড। তাঁর ইনিংসের মাহাত্ম্য এমনই যে উইকেট প্রাপ্তির অকারণ উদযাপন ফেলে বিরাট কোহলিরা পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় ওপেনারের।

অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের রাতে এই ছবি স্পোর্টসম্যানশিপের প্রতীক হয়েও থাকবে।

১৩৭ রানের বিশ্বকাপ জয়ের ইনিংস খেলে ট্রাভিস হেড আর ড্রেসিংরুমে ফেরেননি, ডাগ আউটে সতীর্থদের ভিড়ে আটকে গিয়েছিলেন যে! স্টিভ স্মিথ, মিচেল মার্শ, মিচেল স্টার্কদের কেউ পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে তো কেউ জড়িয়ে ধরছেন হেডকে। সিরাজের পরের বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল জয়সূচক শট খেলার পর হুড়মুড়িয়ে মাঠে ঢুকে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ডাগ আউট। মাঠে ‘হাডল’ করে নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা, মধ্যমণি অবশ্যই ট্রাভিস হেড।

বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরি, সেই সেঞ্চুরিতে দলের বিশ্বকাপ জয়—ট্রাভিস হেড আজীবন গর্ব করার মতো উপলক্ষ পেয়ে গেলেন। ম্যাচের পর তাঁর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, ‘কী অসাধারণ একটা দিন! এই অভিযাত্রায় সঙ্গী হতে পেরে রোমাঞ্চিত।’ চোট ছিল। চোটের কারণে হেডের বিশ্বকাপ স্বপ্নও ভেস্তে যেতে বসেছিল। কিন্তু নির্বাচকরা আস্থা হারাননি বাঁহাতি এই টপ অর্ডারের ওপর।

সর্বশেষ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ম্যাচসেরা হেড সাদা বলে তুলে তুলে মারতে পারেন। তাই হেডের চোট কাটিয়ে ওঠার ওপর বাজি ধরেছিল অস্ট্রেলিয়া। বিনিময়ে অনবদ্য নৈপুণ্যে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন দলকে। টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম ম্যাচে খেলার সুযোগ পান ট্রাভিস হেড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নেমেই সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র ৫৯ বলে। এরপর সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের আগে বোলিংয়ে যে ভূমিকা রেখেছেন হেড, সেটিই ম্যাচসেরা হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। ব্যাট হাতে সেদিনের ৬২ রানও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এরপর গতকালের ফাইনাল। ৪৭ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের সঙ্গে আহমেদাবাদের সোয়া লাখের গ্যালারি যখন দুলছে, তখন পাল্টা আক্রমণ করেন ট্রাভিস হেড। তাতে লণ্ডভণ্ড হয় ভারতের ঘরের মাঠে আরেকবার শিরোপা জয়ের সব আয়োজন।

পাল্টা আক্রমণের সময়টায় স্নায়ুচাপ বেড়ে গিয়েছিল ট্রাভিস হেডেরও, ‘একটু নার্ভাস তো লাগছিলই। তবে মার্নাস (লাবুশানে) দুর্দান্ত খেলেছে, চাপ শুষে নিয়েছিল। তবে আমার মনে হয় মিচ (মার্শ) অল্প সময় ব্যাটিং করলেও ম্যাচের টোন সেট করে দিয়েছিল। এই এনার্জিটাই আমরা চাচ্ছিলাম।’

আর অস্ট্রেলিয়ার এনার্জি ট্রাভিস হেড। যাঁর বিশ্লেষণে, ‘টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তটা দুর্দান্ত ছিল। ম্যাচ যত গড়িয়েছে, উইকেট তত ভালো হয়েছে।’ সেই ‘ভালো’ উইকেটে তৃতীয় অস্ট্রেলীয় হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরি করলেন হেড। রিকি পন্টিং ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর তিনি। শেষোক্তজনের ছায়া আবার হেডের মধ্যে দেখে অস্ট্রেলিয়া।

এত দিন অস্ট্রেলিয়া দেখেছে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ট্রাভিস হেডকে আরো ভালো করে দেখল গোটা বিশ্ব।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker