সুনসান চারদিক, নিস্তব্ধ রাত। রবিবার দুপুরেও এটি ছিল কল্পিত এবং পরাবাস্তব বলে মনে হওয়া এক ছবি। রাত হতে হতে সেটিই বরং প্রবল বাস্তব। নীলে ছেয়ে যাওয়া নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামও তাই উল্টো বিলীন নীল বেদনায়।
দলের চরম বিপর্যয় থেকে তাঁর উত্থানে সঙ্গী হয়ে যান মার্নাস লাবুশানেও। দুজনের জুটি উইকেটে এমন লেপ্টে যায় যে তাঁদের আর বিচ্ছিন্নই করা যায় না। চতুর্থ উইকেটে ১৯২ রানের পার্টনারশিপ ভারতকেও আর ন্যূনতম সম্ভাবনা তৈরি করতে দেয় না। সেঞ্চুরি করে আরো দূরে ছুটতে থাকা হেডের ব্যাট থেকে আসতে পারত উইনিং স্ট্রোকও। কিন্তু মোহাম্মদ সিরাজকে ছক্কা মারতে গিয়ে এই ব্যাটার থামেন ১৩৭ রানে। তখন বিশ্বকাপ জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া। হেডের বিদায়ের পরের বলেই ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে সেই কাজটিও হয়ে যায়। ৪২ বল বাকি থাকতে এক রকম অনায়াসেই ৬ উইকেটের জয়ে নীরব রাতের বিজয় মঞ্চে ওঠেন কামিন্সরা।
যেটিকে দিনের শেষে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া মুহূর্ত হিসেবেও বেছে নেওয়া গেছে অবলীলায়। কারণ রোহিতের বিদায়ের পর থেকেই ভারতের রানের উদ্দাম গতিতে লাগাম পড়ে। ঢিমেতালে এগোতে থাকে স্বাগতিকদের ব্যাটিং। ১০ ওভারেই ৮০ রান তুলে ফেলা দলের মহা শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনও ফাইনালের উত্তাপে যেন পথ হারায় অনেকটা। ফিফটি করলেও এবার আর তেমন এগোতে পারেন না বিরাট কোহলিও। আগের দু্ই ম্যাচে বিস্ফোরক সেঞ্চুরি করা শ্রেয়াস আয়ারও এবার থামেন অল্পতেই। এঁদের হারানোর ধাক্কায় একা হয়ে যাওয়া লোকেশ রাহুলও ৬৬ রান করতে খেলে ফেলেন ১০৭ বল। অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রিত বোলিং তাঁকে ওভাবে খেলতে বাধ্যই করে এক রকম। দুই দফায় ৯৭ ও ৭০ বলে কোনো বাউন্ডারির মুখই দেখেনি ভারত। ফাইনাল জেতার জন্য যথেষ্ট রানও তাই স্কোরবোর্ডে আর জমা করে উঠতে পারে না রোহিতের দল।
মাত্র ২৪০ রান নিয়ে কি আর অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে বিশ্বকাপ ট্রফি ছিনিয়ে নেওয়া যায়? কিন্তু অনিশ্চয়তার ক্রিকেট সেই সম্ভাবনাও তৈরি করে ফেলে। আসরে প্রথমবারের মতো নতুন বল হাতে পাওয়া মোহাম্মদ সামি নিরাশ করেন না এবারও। দ্রুতই ফেরান ডেভিড ওয়ার্নারকে। আরেক প্রান্ত থেকে জসপ্রিত বুমরাহ তুলে নেন মিচেল মার্শ ও স্টিভেন স্মিথকেও। ব্যস, প্রতিপক্ষকে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানো দলে পরিণত করে রোহিতরাও প্রবলভাবে ফিরে আসার পথ খুলে ফেলেন।
সেই খোলা পথই বন্ধ হওয়ার শুরু ট্রাভিস হেডের ব্যাটে। যোগ্য সঙ্গত দেন লাবুশানেও। আসরজুড়ে যে কাজটি রোহিত আর কোহলি মিলে করে এসেছেন, সেই ছবিই এবার ফুটতে থাকে এই দুই অস্ট্রেলিয়ানের ব্যাটে। একজন চড়াও হন তো আরেকজন রয়েসয়ে খেলতে থাকেন। লাবুশানেও (১১০ বলে ৫৮*) হয়ে ওঠেন ধীরস্থিরতার প্রতীক। ৯৯ বলে ফিফটি করা বলে সে কথাই। অন্যদিকে হেড চড়ে বসেন প্রতিপক্ষের মাথায়। ৫৮ বলে ফিফটি করা পর্যন্ত একটু সদয় হলেও সেখান থেকে নিজের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে যেতে আবার নির্দয়ও। সেখান থেকে মাত্র ৩৭ বলে তিন অঙ্কে যাওয়া হেডের ব্যাটেই অস্ট্রেলিয়ার মাথায় ওঠে বিজয়মুকুট।