ইউরোপ সেরার মুকুটের জন্য স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাব বার্সেলোনার অপেক্ষা দীর্ঘ ১০ বছরের। সবশেষ ২০১৪-১৫ মৌসুমে তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ঘরে তুলেছিল। অন্যদিকে, ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলানের অপেক্ষা আরও বেশি। তারা সর্বশেষ ইউরোপ সেরা হয়েছিল ২০০৯-১০ মৌসুমে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার আরও একবার দু’দলের সামনে হাতছানি তাদের শিরোপা পুনরুদ্ধারের। সেই লক্ষ্য পূরণের পথে বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বার্সেলোনার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে এই দুই ক্লাব।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ম্যাচটি মাঠে গড়াবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ইউরোপের দুই দেশ স্পেন ও পর্তুগালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আগের দিন থেকে ভুগছিল জনজীবন। এই বিভ্রাটে বিমান চলাচল এবং গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি জরুরি অবস্থা ছাড়া হাসপাতালগুলোর অপারেশনও স্থগিত করতে হয়। এমন অবস্থায় বার্সা ও ইন্টারের মধ্যকার ম্যাচটি না হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। তবে রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
আপাতত স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন কিংবা উয়েফার পক্ষ থেকে খেলা স্থগিতের কোনো বিবৃতি আসেনি। চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে বার্সেলোনা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে জিতে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কাতালানরা. স্প্যানিশ লা লিগা জয়েরও একদম কাছাকাছি হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। এই দুটি ট্রফি জিতলে আরও একবার ট্রেবল উল্লাসে ভাসবে বার্সেলোনা।
অন্যদিকে মৌসুমের শেষভাগের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে যেন ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে ইন্টার মিলান। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ক্লাবটি হেরেছে শেষ তিন ম্যাচে। আজ বার্সার বিপক্ষে তাদের পরীক্ষাটা আরও বড়। প্রতিপক্ষের প্রতি যথেষ্ট সম্মান থাকলেও বার্সাকে ভয় পাচ্ছেন না ইন্টার কোচ সিমোনে ইনজাগি। সিরি আ তে রোববার ঘরের মাঠে রোমার বিপক্ষে তার দল ১-০ গোলে হারে। এর আগের রাউন্ডে বোলোগনার মাঠেও একই ব্যবধানে হেরেছিল তারা। পরে ইতালিয়ান কাপের সেমিফাইনালে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলে হেরে ট্রেবলের দৌড় থেকে আগেই ছিটকে গেছে তারা।
লীগের টানা দুই হারে সিরি আ শিরোপার ভাগ্যও হাত থেকে ফসকে গেছে। ৩৪ ম্যাচে ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে নাপোলি, আর সমান সংখ্যক ম্যাচে ৭১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে ইন্টার। ইন্টার মিলান কোচ ইনজাগি বার্সা ম্যাচের আগে বলেন,‘বার্সেলোনা কেমন দল আমি জানি। এর জন্য কোপা দেল রের ফাইনাল ম্যাচ দেখার দরকার ছিল না। আমরা বার্সার প্রতি সম্মান রেখেই নামবো,তবে ভয় নিয়ে নয়।’
২০১০ সালে হোসে মরিনহোর অধীনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পর ইতালিয়ান জায়ান্টরা আর মাত্র একবার ফাইনাল নিশ্চিত করতে পেরেছিল; ২০২২-২৩ মৌসুমে তারা ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ১-০ গোলে শিরোপা হারায়। একই হতাশা রয়েছে বার্সেলোনারও। তাদের শিরোপা অপেক্ষার হিসাবটা কম হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সার সাম্প্রতিক বছরগুলোর দুর্দশা কারোরই অজানা নয়। মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ ত্রয়ীর শিরোপা জয়ের পর যেন একের পর এক হতাশায় ডুবেছে কাতালান ক্লাবটি।
বিশেষ করে গত তিন মৌসুমে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে স্প্যানিশ জায়ান্টদের. তবে এবারের বার্সা ভিন্ন। হান্সি ফ্লিকের অধীনে পুনরুত্থানের গল্প লিখছে কাতালুনিয়ানরা। শেষ পর্যন্ত লেভানডফস্কি,ইয়ামাল,রাফিনহারা ইউরোপ জয়ের স্বাদ দলকে আরেকবার এনে দিতে পারবে কিনা, আজকের সেমিফাইনালের প্রথম লেগ তারই দেখার অপেক্ষায়।