গোপনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঝারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয়দের অভিযোগে জানা গেছে, কিছু দিন আগে ঝারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলে ৬ মাসের জন্য অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। অ্যাডহক কমিটি থাকাকালিন নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠনের কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক সু কৌশলে গোপনে নিয়ম নীতি ছাড়াই আমির হোসনকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করেন।
এমনকি, গঠিত কমিটি সম্পর্কেও এর আগে কাউকে জানানো হয়নি। এছাড়া নির্বাচনের জন্য কোন তফসীল ঘোষনা করা হয়নি। কিংবা তফসিল ঘোষনা করা হলেও তা গোপন রাখা হয়েছিলো। বিদ্যালয়ের শতকরা ৮০ ভাগ অভিভাবক সদস্য কমিটি গঠনের বিষয়টি জানেননা এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ কোন শিক্ষকই অবগত নয়।
প্রধান শিক্ষক দলিলুর রহমান দেলু মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গোপনে অবৈধভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবকরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১২ টায় বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে শতশত অভিভাবক গোপন ম্যানেজিং কমিটি গঠনের ক্ষোভ প্রকাশ করে বিক্ষোভ করেছেন।
এ সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উপস্থিত ক্ষুব্ধ অভিভাবক আব্দুল হালিম বলেন, আমার কাছে একটা স্বাক্ষর নিতে যায় সেখানে লিখা ছিল কমিটির জন্য প্রস্তাব কারী ও সমর্থনকারী আজকে এসে জানতে পারি কমিটি নাকি গঠন হয়ে গেছে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান এতো নিচে চলে গেছে এক মাত্র প্রধান শিক্ষকের গাফিলতির কারনে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন ম্যানেজিং কমিটি গঠন বিষয় আমরা কিছু জানি না কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি।
অভিভাবক আহসান হাবিব বলেন, কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই কিভাবে কমিটি গঠন করল তিনি আরও বলেন গতকাল প্রধান শিক্ষক বলছেন আজকে মনোনয়ন পত্র বিতরণ করা হবে এবং তিনি এটাও বলছেন মনোনয়ন পত্র ৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হবে। আজকে আমরা মনোনয়ন ফর্ম কিনতে আসলে প্রধান শিক্ষক বলে কমিটি হয়ে গেছে কিন্তু কিভাবে কখন কমিটি গঠন করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোন কথাই বললো না।
আরেক অভিভাবক কালাম বলেন প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের হঠকারি ও দুরীভসন্ধিমুলক কর্মকান্ডের জন্য আমরা এলাকাবাসি চরম হতাশাগ্রস্ত ও ক্ষুব্ধ। এই বিদ্যালয়ের উন্নতি কল্পে এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করতে খুব শিঘ্রই তফশিল ঘোষনা করে এলাকাবাসিকে একটি স্বচ্ছ কমিটি উপহার দেবার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। তিনি আরও বলেন এই বিদ্যালয়ের চতুর পাশে নোংরা আবর্জনার স্তূপ শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সাবেরুল ইসলাম ডলার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশের প্রতিটা সেক্টরের দুর্নীতি কঠোরহস্তে দমন করে দেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন প্রধান শিক্ষক দলিলুর রহমান কার ইশারায় এইরুপ অবৈধ মনগড়া পকেট কমিটি প্রস্তুত করে সেটাকে বৈধতা দেবার অপচেষ্টা করছেন সেটা অনুসন্ধান করে প্রকাশ করার জন্য আপনাদের প্রতি অনুরোধ রইল। এসময়, সাবেরুল ইসলাম ডলার, আহসান হাবিব, কালাম, ফরহাদ হোসেন সহ শতাধিক অভিভাবক সদস্য ও এলাকাবাসি উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তারা আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকের এই রকম অনিয়ম ও অনাচাররের কারনে অধিকাংশ অভিভাবক নিরব প্রতিবাদ হিসেবে নিজেদের সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে এক সময়ে বিদ্যালয়টিতে শতশত শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও বর্তমানে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী সংকটের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।
বিদ্যালয়ের সহ প্রধান শিক্ষক মাজেদুল ইসলাম বলেন,কিভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে আমি কিছুই জানি না এবং কোন নোটিশও দেখিনি সব কিছু প্রধান শিক্ষক জানেন।
ওই বিদ্যালয়ের নতুন কমিটির সভাপতি আমির হোসন জানান, আমি এডহক কমিটির সভাপতি হলেও নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ভালো বলতে পারবেন আমি শুধু একদিন শিক্ষা অফিসার অফিসে গিয়ে একটা স্বাক্ষর করেছি । আপনি প্রধান শিক্ষকের কাছে বিস্তারিত জানুন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দলিলুর রহমান সংবাদ কর্মীর উপস্থিতি টের পেলে সটকে পড়েন পরবর্তিতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এ বিষয় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রশিদ মুঠোফোনে জানান, একটা কমিটি গঠন করতে তো নিয়ম নীতি মানতে হবে কিন্তু প্রধান শিক্ষক কিভাবে কমিটি গঠন করলেন সেটা তো বলতে পারছি না তবে অফিসে ফাইল দেখলে বলতে পারব।