সাহিত্য

চিকিৎসকের ‘ফাঁদে পড়ে পঙ্গু’ তসলিমা!

সম্প্রতি নিজ বাসার মেঝেতে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলেন প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, তসলিমার পায়ের ফিমার নামের হাড়টির গলায় একখানা ক্র্যাক হয়েছে। এরপর তার হিপ জয়েন্টে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেই অস্ত্রোপচার শেষে একের পর এক ফেসবুক পোস্টে তসলিমা দাবি করছেন, ওই প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাকে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছেন!

আজ বৃহস্পতিবার বিকালে এক পোস্টে তসলিমা লিখেন, ‘মানুষকে বিশ্বাস করার ফল কী হতে পারে, যারা বন্ধু নয় তাদের বন্ধু ভাবার ফল কী হতে পারে, তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। নিজের জীবন দিয়ে টের পেলাম। হাসপাতালের এক ডাক্তারকে বিশ্বাস করেছিলাম। ভেবেছিলাম সে বোধ হয় বন্ধু, তাকে জানিয়েছিলাম যে পড়ে গিয়েছিলাম ঘরে, এক্সরে করতে হবে। সেই বন্ধু আমাকে পাঠিয়ে দিল তার হাসপাতালের অর্থপেডিক ডাক্তারের কাছে যিনি হিপ রিপ্লেসমেন্টের এক্সপার্ট। সেই এক্সপার্ট শুরু থেকে আমার ফিমারের সামান্য ফ্র্যাকচারের ফিক্সেশান টিট্মেন্ট না করে আমার হিপ রিপ্লেসমেন্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। আমি বাধা দিয়েছি। তিনি বারবার এসেছেন আমাকে কনভিন্স করতে। তিন চারজন ডাক্তারকে পাঠিয়েছেন কনভিন্স করতে। আমাকে কোনও সময় দেওয়া হয়নি চিন্তা করতে, কারও সঙ্গে পরামর্শ করতে বা শুভাকাংখীদের কারো সঙ্গে কথা বলতে।

যে কারণে হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হয় —
১ যদি জয়েন্ট রোগের প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় ইত্যাদি শল্য চিকিৎসা ব্যর্থ হয়
২ যখন জয়েন্ট পেইন কোনও রকম ব্যথার ওষুধে সারানো যায় না
৩ যখন জয়েন্ট রোগের কারণে মুভমেন্ট করা সম্ভব হয় না, যখন এক পাও হাঁটা যায় না
৪ যখন জয়েন্ট সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে ক্ষয় হয়ে শেষ পর্যায়ে চলে আসে
৫ যখন জয়েন্টের তীব্র যন্ত্রণায় মানুষ কোনও কাজ করতে পারে না, ঘুমোতে পারে না।
৬ যখন নানা রকম আর্থ্রাইটিস রোগে জয়েন্ট বাতিল হয়ে যায়
ওপরের কারণ ছাড়া হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হয় না।

অথচ ওপরের একটি কারণও আমার ছিল না। আমার জয়েন্টে কোনও ধরণের রোগ ছিল না। জয়েন্ট আমার চমৎকার ছিল, কোনওদিন কোনও পেইন ছিল না। যে সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম, সেই সমস্যার ট্রিট্মেন্ট না করে ক্রমাগত মিথ্যে কথা বলে আমার শরীরের সুস্থ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছে। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না বড় ডাক্তাররা এমন ভয়াবহ ক্রাইম করতে পারেন। আর আমি জানিনা আমারও বুদ্ধিসুদ্ধি কোথায় উবে গিয়েছিল যে এমন ক্রাইমের শিকার হতে নিজেকে দিলাম!’

এখানেই শেষ নয়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তসলিমা আরও একটি পোস্টে লিখেন, ‘ধিক্কার দিচ্ছি নিজেকে। ধিক্কার দিচ্ছি এতকালের আমার মেডিক্যাল জ্ঞানকে। আমাকে হাসপাতালে মিথ্যে কথা বলা হয়েছিল যে আমার হিপ বোন ভেঙ্গেছে। আমার কোনও জয়েন্ট পেইন ছিল না, জয়েন্ট ডিজিজ ছিল না। আমাকে মিথ্যে কথা বলে, ফিমার ফ্র্যাকচারের ট্রিট্মেন্টের নামে আমাকে হিপ জয়েন্ট কেটে, ফিমার কেটে ফেলে দিয়ে আমাকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধিক্কার দিচ্ছি আমি কেন ক্রিমিনাল টিমের ট্র্যাপে পড়লাম। আজ আমি এক্সরে রিপোর্ট দেখলাম আমার। আমার কোথাও কোনও ফ্র্যাকচার হয়নি সেদিন।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker