গাজীপুর

কালিয়াকৈরে রফিক-রাজু স্কুলের পরিচালক লাপাত্তা ব্যবসায়ীদের অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শিক্ষকদের বেতন, ভবন ও গাড়ী ভাড়াসহ বিভিন্ন দোকানে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে রফিক-রাজু ক্যাডেট একাডেমির এক পরিচালক লাপাওা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষকদের বেতনসহ প্রায় ১০/১২ জন ব্যবসায়ীর বকেয়া টাকা না দিয়ে গোপনে পাড়ি জমিয়েছেন সূদুর মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই শহরে। এতে চরম হতাশায় ভুগছেন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগী শিক্ষক ও ব্যবসায়ীরা।

এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী শিক্ষক-ব্যবসায়ী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত ৬/৭ বছর আগে কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে তপন মাহমুদ কালিয়াকৈর বাইপাস সাহেববাজার এলাকায় সিরাজুল ইসলামের বহুতল ভবন ভাড়া নেন। পরে তিনি সেখানে টাঙ্গাইল থেকে পরিচালিত রফিক-রাজু ক্যাডেট একাডেমির একটি শাখা খুলেন। আবাসিক ও অনাবাসিকভাবে মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করে আসছিলেন ওই স্কুলের পরিচালক তপন মাহমুদ। কিন্তু তিনি পরিকল্পনা মাফিক দীর্ঘ দিন ধরে কৌশলে ভবনের ভাড়া প্রায় ২০ লাখ, শিক্ষকের বেতন প্রায় ৩ লাখ, মীম এন্টারপ্রাইজ এর প্রেস ও গাড়ি ভাড়া প্রায় ১২ লাখ, মাখনলাল স্টোরের প্রায় ৫৬ হাজার টাকা, আমজাদের মুরগি দোকানে ৫০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন দোকান ও টেইলার্সে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বকেয়া রাখেন। পরে ওই টাকা না দিয়ে গত মাসে গোপনে সূদুর মধ্য প্রাচ্যের দুবাই শহরে পাড়ি জমিয়েছেন ওই স্কুলের পরিচালক তপন মাহমুদ। তার লাপাত্তা হওয়ার খবর পেয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ওই স্কুলে গেলেও তার ভাই নতুন পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন মনির ও অপর পরিচালক রাকিবুল ইসলাম পাওনাদারদের পাত্তা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম হতাশায় ভুগছেন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগী শিক্ষক ও ব্যবসায়ীরা।

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, আশপাশের বিভিন্ন স্কুলের পরিচালক ও শিক্ষকদের অভিযোগ, রফিক-রাজু ক্যাডেট একাডেমির এ সব শাখার কোনো ইন নাম্বার নেই। তারপর ও বিভিন্ন স্থানে যত্র তত্র শাখা খুলে শিক্ষা ব্যবস্থার মান ক্ষুন্ন করছে।

কালিয়াকৈর শাখার সাবেক পরিচালক অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হলেও সম্প্রতি চন্দ্রা ত্রিমোড়ে সরকারী স্কুলের পাশে আবার আরেকটি শাখা খোলার পায়তারা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে কালিয়াকৈরে শিক্ষা ব্যবস্থার সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।

ভুক্তভোগী মাখন লাল স্টোরের প্রোভাইটার জহরলাল জানান, আমার দোকানের স্কুলের নামে ৫৬ হাজার টাকা বাকী রয়েছে। কিন্তু স্কুলের পরিচালক তপনকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তার বাবাকে বিষয়টি জানানো হলেও তেমন কোনো আশ্বাস দেননি।

গোলাম মোস্তফা লিটন জানান, স্কুলে গাড়ি ভাড়াও প্রেসের বিল বাবদ ১২ লাখ টাকা পাই। ওই স্কুলের পরিচালককে না পেয়ে গ্রামের বাড়ি গেলেও তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা দিবো, দিচ্ছি বলে বিভিন্ন ভাবে ঘুরাচ্ছেন।

ওই স্কুলের সাবেক পরিচালক তপন মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা না গেলেও তার ভাই ও ওই স্কুলের নতুন পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন ধীরে ধীরে সবার বকেয়া টাকা পরিশোধ করার কথা জানালেও অপর পরিচালক রাকিবুল ইসলাম জানান, ওই বকেয়া টাকা সাবেক পরিচালকের, এর দায় আমরা নিবো না। তবে স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালার বকেয়া টাকা ধীরে ধীরে পরিশোধের চেষ্টা করবো।

এব্যাপারে রফিক রাজু ক্যাডেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, ওই খানে চুক্তি ভিত্তিক শাখা দেওয়া
হয়েছে। এর বাইরে দায়-দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের। এছাড়া বিস্তারিত জানতে হলে আমার টাঙ্গাইল অফিসে আসেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতার্ জাকির হোসেন মোল্লা জানান, রফিক-রাজু যে কিল্ডার গার্ডেন স্কুল আছে, সেগুলো আমাদের অধীনে
নয়। এসব স্কুলের বকেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া এখতিয়ার আমাদের নেই।

এছাড়া এতো অনিয়মের পরও নতুন করে চন্দ্রা এলাকায় কিভাবে আরেকটি শাখা দেয়া হচ্ছে, তার আমার জানা নেই। তবে তদন্ত করে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker