ফুটবল

ফুটবলের ‘কালো মানিক’ এর যত খ্যাতি

ফুটবলকে শিল্পের মর্যাদায় তুলে এনেছিলেন যিনি, ১০ নম্বর জার্সিকে দিয়েছিলেন বিশেষত্ব- ‘কালো মানিক’ খ্যাত ফুটবলের সেই রাজা পেলে আর নেই। বাংলাদেশ সময় গতরাত একটায় সাও পাওলোর এক হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর। ব্রাজিলীয় কিংবদন্তীর মৃত্যুতে শোকে ভাসছে ক্রীড়াজগতসহ গোটা বিশ্ব। শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানিয়ে মেসি, রোনালদো, নেইমারসহ ফুটবল তারকাদের শোকবার্তায় ভরে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।

অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন পেলে। ২০১৫ সালে স্নায়ুর সমস্যায় তার মেরুদন্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিডনি ও প্রস্টেটের সমস্যা নিয়ে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার সঙ্গে যোগ হয় কোলন ক্যান্সার। এই মরণব্যধির সঙ্গে লড়াই করে কেউ কেউ জিতেও যান। পেলেও লড়েছেন কয়েক বছর। কিন্তু বয়সটা যে তার পক্ষে ছিলো না। হয়েছিলো ৮২।

পেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গত ১ ডিসেম্বর। শরীরে ক্যান্সারের কেমো নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়েই টেলিভিশনে পুরো বিশ্বকাপ উপভোগ করেছেন ব্রাজিলিয়ানদের প্রিয় ‘ও রেই’ অর্থাৎ ফুটবলের রাজা। পেলেও উত্তরসূরিদের নিয়মিত শুভকামনা জানাতে, প্রেরণা জোগাতে দিয়ে গেছেন বার্তা। এমন কি, ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার রোমাঞ্চকর জয়ের পর চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের অভিনন্দন জানাতেও ভুল হয়নি।

এবারের ‘বড় দিন’ সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে পরিবারের সঙ্গে পালন করেন পেলে। এরপরই অবস্থার অবনতি। কেমোথেরাপিতে শরীর সাড়া না দেওয়ায় শুরু হয় ‘পলিয়েটিভ কেয়ার’। ব্যথা আর কষ্ট কমানোর সেবা। হয়তো এই কষ্ট আর সয়ে যেতে চাননি বলেই চার দিন পর বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত ও ফুটবল প্রেমীদের শোকে ভাসিয়ে পরপারে গেলেন মানুষের চোখে সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার। যেখানে দু’বছর আগে এই ডিসেম্বরেই ৬০ বছর বয়সে পাড়ি জমিয়েছিলেন শতাব্দিসেরা আরেক ফুটবলার আর্জেন্টিনার ডিয়েগো ম্যারাডোনা।

পুরো নাম এডিসন আরান্টেস ডো নাসিমেন্টো। ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ত্রেস কোরাচয়ের মিনাস জেরাইসে জন্ম নেওয়া এই শিশুর নামটি রাখা হয়েছিলো বিখ্যাত মার্কিন উদ্ভাবক টমাস এডিসনের নামানুসারে। ডাক নাম ছিলো ‘জিকো’। স্কুলে পড়ার সময় তার ফুটবল শৈলীর জন্য বন্ধুরা তাকে ‘পেলে’ নাম দেন। এ নামেই বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পান ফুটবলের এই কিংবদন্তি।

শৈশব থেকেই ফুটবলে অসামান্য মেধার বিকাশ ঘটান পেলে। ১৯৫৭ সালে ব্রাজিলের সান্তোস ক্লাবে ১৬ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে নাম তোলেন। সে বছরই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে। বিশ্বকাপ খেলেন ১৯৫৮, ‘৬২, ‘৬৬ ও ‘৭০-এ। ‘৬৬-র আসর বাদ দিয়ে বাকি তিন আসরেই ট্রফি জেতেন। বিশ্ব সেরার মঞ্চে তিনিই এই কীর্তির একমাত্র কারিগর। ‘৭০-এ তার হাতে ওঠে সেরা খেলোয়াড় ‘গোল্ডেন বলও’।

খেলা ছাড়েন ১৯৭৭ সালে ৩৭ বছর কয়সে। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে ৯২ ম্যাচে ৭৭ গোল করে ব্রাজিলের সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতা পেলে। এক হাজার ৩১৩ ম্যাচে গোল তার এক হাজার ২৮১টি। যেই রেকর্ড আজও অম্লান।

ফুটবলে ‘১০ নম্বর’ জার্সির বিশেষ মূল্যায়ন তাকে দিয়েই। বিশ্বজুড়ে ফুটবলকে জনপ্রিয় করার পেছনেও বড়ো অবদান তার। যা তাকে ‘ফুটবলের রাজা’, ‘ফুটবলের সম্রাট’ ও ‘কালো মানিক’ উপাধি পাইয়ে দেয়। ফুটবলে অনেক ‘প্রথম’ হিসেবে গড়ে গেছেন অসংখ্য রেকর্ড। সময়ের সাথে সাথে সে সবের বেশ কিছু ভেঙ্গে গেলেও তার কীর্তি একটুও মলিন হবে না। সেসবই তাকে অমর করে রাখবে ইতিহাসের পাতায়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker