ফুটবল

মেসিদের বাস চালক জনতার ঢলে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন

ক্লদিও জাবালা আর্জেন্টিনার দূরপাল্লার বাসচালক। প্রায় ৩০ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। গত মঙ্গলবারের দিনটি তিনি জীবনে কখনো ভুলতে পারবেন না। আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে লিওনেল মেসিরা যখন বিশ্বকাপ হাতে এজেইজা বিমানবন্দরে নামলেন, জাবালা সেখানে বাস নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। আর্জেন্টিনা দল তাঁর বাসে চড়েই বুয়েনস এইরেসে এসেছে।

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘ক্লারিন’কে এ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন জাবালা, ‘দিবাগত রাত ৩টার দিকে প্রথম দেখি ওদের (জাতীয় দল)। তখন ওরা বিমানবন্দরে নেমেছে।’

মেসিদের নিয়ে বাসটা চালিয়ে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনে (এএফএ) আসেন জাবালা। লিওনেল স্কালোনির দল সেখানে রাত্রি যাপন করেন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মেসিদের সেখান থেকে বাসে চড়িয়ে বুয়েনস এইরেস ওবিলিস্ক চত্বরের দিকে রওনা হন জাবালা, ‘এজেইজা থেকে ওদের নিয়ে ফেডারেশনে এসেছি। খেলোয়াড়েরা সেখানে রাত্রিযাপনের পর বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ রিচিয়েরি মহাসড়কে যাত্রা শুরু করি।’

আর্জেন্টাইনদের উৎসব এখনো শেষ হয়নি। তবে সেই দিনটায় উৎসবের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। বুয়েন্স এইরেসের সব রাস্তাঘাট ও বাসা–বাড়িতে তিল ঠাঁই ছিল না। মেসিদের উদ্‌যাপনে সঙ্গী হতে সবাই রাস্তায় নেমে এসেছিলেন।

দ্বিতল বাসটি খুব ধীরে চালান জাবালা। জনতার ঢল নামায় এ ছাড়া উপায় ছিল না। বাসের ভেতর আর্জেন্টিনার ২৬ জন জাতীয় বীর। সাবধানেই চালাতে হতো। তবে এই যাত্রা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে গিয়ে শেষ হয়নি। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ায় ওবিলিস্ক স্কয়ারে আর যাওয়া হয়নি। নিরাপত্তার কথা ভেবে রিচিয়েরি মহাসড়ক থেকে হেলিকপ্টারে করে মেসিদের ফিরিয়ে নেওয়া হয় এএফএ ভবনে।

মজার ব্যাপার, জাবালা জানতেন না বাসটা নিয়ে কোথায় যেতে হবে! বাসের সামনে নিরাপত্তারক্ষীদের মোটরসাইকেলের বহর ছিল। সেই বহর যে পথে এগিয়েছে জাবালার বাসও তাদের অনুসরণ করেছে, ‘শোভাযাত্রা কোথায় শেষ হবে, তা জানতাম না। বাসের সামনে মোটরসাইকেলের বহরকে অনুসরণ করে চালিয়েছি। কোথায় যেতে হবে কেউ আমাকে বলেনি। আমি শুধু মোটরসাইকেলের বহর অনুসরণ করেছি।’

তবে জনতার ভিড়ের মধ্যে সমস্যায়ও পড়েছিলেন জাবালা। চেনা রাস্তা হলেও এত এত মানুষের ভিড়ে পথও হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছিল। ঠিকমতো চিনতে পারছিলেন না, ‘জনতার স্রোতের মধ্যে কয়েকবার মনে হয়েছে, আমি কোথায় আছি! ঠিকমতো চিনতে পারছিলাম না। আমি জানতাম রিচিয়েরির রাস্তায় আছি। পেছনে একটি ব্রিজও ফেলে এসেছি। কিন্তু নিচে (রাস্তায়) প্রচুর মানুষ থাকায় কিছুই বুঝতে পারিনি।’

জাবালা জানতেন না, মেসিরা তাঁর ছাদখোলা বাসে থাকতে ব্রিজ থেকে সমর্থকেরা সেই বাসে লাফ দিয়েছেন। এমনকি মেসিদের সঙ্গে একটা সেলফিও তুলতে পারেননি এই চালক। ‘আমি শুধু নিজের কাজটা করেছি। বাসায় ফিরে সব শুনেছি’—বলেন জাবালা। তাঁর কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, ‘বহুদিন পর দেশের সব মানুষকে একত্রে দেখেছি। সবাইকে ভীষণ সন্তুষ্ট মনে হয়েছে। আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এটাই সবচেয়ে বড় সত্য। বাস আমি বা অন্য কেউ চালাক, তাতে কিছু যায় আসে না।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker