ফুটবল

চাপমুক্ত মেসি এখন অপ্রতিরোধ্য

লড়াইটা ছিল ইউরোপের সেরা বনাম লাতিন আমেরিকার সেরা দলের। শেষ হাসি লাতিন আমেরিকারই। বুধবার কোপা আমেরিকা বিজয়ী আর্জেন্টিনা ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে দিলো ইউরো কাপ বিজয়ী ইতালিকে। কোপা আমেরিকার পর আবার দেশের হয়ে ট্রফি জিতলেন লিয়োনেল মেসি। ছুঁয়ে ফেললেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। পর্তুগালের তারকা ফুটবলার দেশের হয়ে ইউরো কাপ এবং নেশন‌্স লিগ জিতেছেন। মেসি কোপা আমেরিকার পর ফাইনালিসিমাও জিতলেন। অর্থাৎ, দেশের হয়েও ট্রফির নিরিখেও সমান-সমান হয়ে গেলেন মেসি-রোনালদো। বুধবার আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করলেন লাউতারো মার্তিনেস, অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া এবং পাওলো ডিবালা।

শক্তিশালী ডিফেন্সের জন্য এক সময় গোটা বিশ্বে সমাদৃত হতো ইতালি। তাদের ‘কাতানেচ্চিয়ো’ সিস্টেম বিশ্বের বহু দেশ পরে অনুকরণ করা শুরু করে। ওই ইতালিরই ডিফেন্সের এখন যা হাল, দেখতে শিউরে উঠতে হয়। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জিয়োর্জিয়ো কিয়েল্লিনি এবং লিয়োনার্দো বোনুচ্চি, দু’জনেই বয়স হয়েছে। দু’প্রান্তে এমার্সন এবং জিয়োভান্নি দি লোরেঞ্জোও চূড়ান্ত হতাশ করেছেন। গোলকিপার জিয়ানলুইগি ডোনারুম্মা না থাকলে এ দিন আরো লজ্জার মুখে পড়তে হত ইটালিকে।

বুধবার নজর ছিল একজনের দিকেই। তিনি লিওনেল মেসি। বার্সেলোনা ছাড়ার পর থেকে গোটা জীবনটাই বদলে গিয়েছে তার। প্যারিসে গিয়ে শুনতে হয়েছে ব্যঙ্গাত্মক শিস। পরিবারকে পড়তে হয়েছে কটাক্ষের মুখে। চোট-আঘাতে অনেক ম্যাচে খেলতে পারেননি। কিন্তু দেশের হয়ে এখন তিনি অনেক বেশি দায়িত্ববান, অনেক বেশি খোলামেলা। সম্ভবত দেশের জার্সিতে আগে একটি ট্রফি জিতে ফেলেছেন বলে তার মাথায় থাকা বিরাট প্রত্যাশার চাপটা চলে গিয়েছে।

ইতালির বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে একটি ফ্রিকিক মিস করেন। একটু নিচে থেকে খেলছিলেন এ দিন। গোল করার থেকে খেলা তৈরি করায় মন দিয়েছিলেন বেশি। তাতেও আর্জেন্টিনার প্রথম গোল এল তার পাস থেকেই। জিয়োভান্নি লো সেলসোর থেকে বল পেয়েছিলেন মেসি। বাঁ দিক দিয়ে দৌড়তে দৌড়তেই পাস দেন লাউতারো মার্তিনেসকে। চলতি বলে পা ছুঁইয়ে গোল করেন মার্তিনেস। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ভূমিকা সামান্য পাল্টাল। আর তাতেই অন্য চেহারায় দেখা গেল আর্জেন্টিনার অধিনায়ককে। আরো বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন তিনি। ৬৩ থেকে ৬৬, মাত্র চার মিনিটে ঝড় বইয়ে দিলেন। ডান দিকে অসাধারণ একটি পাস দিয়েছিলেন লো সেলসোকে, যা অনায়াসে আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোল হতে পারত। এর পরেই আর্জেন্টিনার বক্সের সামান্য বাইরে জর্জিনহোর পা থেকে বল কেড়ে লম্বা দৌড় দিলেন। ইটালির বক্সে পৌঁছে তার নেয়া শট কোনো মতে বাঁচালেন ডোনারুম্মা। দু’মিনিট পরেই আবার মেসির জাদু। এ বার চকিতে ডান পায়ে নেয়া শট ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচালেন ইতালির গোলকিপার। গোল পেলেন না ঠিকই। কিন্তু ম্যাচের শেষ গোলের পাসও এলো মেসির পা থেকেই।

বুধবারের ম্যাচে প্রথম থেকেই দাপট ছিল মেসিদের। আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করে। পাঁচ মিনিটের মাথায় ইতালির বক্সের সামান্য় বাইরে মেসিকে ফাউল করেন জর্জিনহো। মেসির ফ্রিকিক ওয়ালে লাগে। ২১ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ইতালি। জিয়াঙ্কোমো রাস্পাদোরির ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে গোল করার চেষ্টা করেন আন্দ্রে বেলোত্তি। তবে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেসের দক্ষতায় আর্জেন্টিনা সে যাত্রায় বেঁচে যায়।

সাত মিনিট পরেই অবশ্য এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেসির পাস থেকে গোল করেন মার্তিনেস। বিরতির সামান্য আগে আবার এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। গোলকিপার এমিলিয়ানোর পাস এসে পড়ে মার্তিনেসের পায়ে। তিনি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দি মারিয়াকে পাস দেন। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞ উইঙ্গার গোল করতে ভুল করেননি। দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনাকে আরো আক্রমণাত্মক খেলতে দেখা যায়। বিপক্ষ গোলকিপারের জন্যেই এগিয়ে যেতে পারেনি তারা। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে আর মেসিদের ধরে রাখতে পারেনি ইতালি। বদলি হিসেবে নামা ডিবালা আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোল করেন।

দেশের হয়ে এ দিনই শেষ ম্যাচ খেললেন কিয়েল্লিনি। বিদায়বেলায় মাঠ ছাড়তে হলো মাথা নিচু করেই।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker