ফুটবল

রিকি পুচ নয়, গাভিকে নিয়ে বার্সেলোনার স্বপ্ন

লা লিগায় কাদিজ আর ইউরোপা লিগে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে দুটি হার বার্সেলোনাকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু কাল রাতে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে জয়টা অন্তত আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার ব্যাপারে বার্সেলোনার আশা বাঁচিয়ে রাখছে। তবে সোসিয়েদাদের বিপক্ষে বার্সার জয়ের ধরনটাই কোচ–সমর্থকদের সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দিয়েছে।

পিয়েরে–এমেরিক অবামায়েং তাঁর দারুণ ফর্ম ধরে রেখেছেন। চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরা উসমান দেম্বেলেও ছিলেন দারুণ। তবে সবাইকে ছাপিয়ে ১৭ বছর বয়সী গাভি তাঁর প্রতিভার প্রমাণ রেখে চলেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে দুর্দান্ত গাভি কাল সোসিয়েদাদের বিপক্ষেও সবার মন কেড়েছেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যম গাভির পারফরম্যান্স নিয়ে বলছে, তাঁর খেলা দেখে মনেই হয় না, ১৮ বছর বয়স হতে তাঁর এখনো চার মাস বাকি। লা মাসিয়া একাডেমিতে বেড়ে ওঠা গাভির মধ্যে দ্রুতগতির পাসিং ফুটবল ও বল ধরে রেখে খেলার ব্যাপারটি পুরোমাত্রাতেই আছে। আর এ ধরনের ফুটবল যে বার্সেলোনা সমর্থকেরা ভালো বাসেন, সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই।

গাভির খেলা দেখে অনেকেরই রিকি পুচের কথা মনে পড়ছে। দুই–তিন মৌসুম আগে পুচকে নিয়ে আশা জেগেছিল বার্সা শিবিরে। ভালভার্দে কিংবা সেত এতিয়েনের সময় পুচকে অসম্ভব প্রতিভাধর মনে করা হতো। কিন্তু শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার কারণে দৃশ্যপট থেকে হারিয়েই গেছেন তিনি। তবে গাভি পুচের ঠিক উল্টো। তিনি পরিশ্রমী। শৃঙ্খলা তাঁর খেলোয়াড়ি নীতির অংশই।

তরুণ প্রতিভা দলে থাকলে সেটি পুচ না হয়ে পেদ্রি কিংবা গাভি হবে—এটাই সবাই চায়। গাভির বছর পাঁচেকের বড় হয়েও পুচ নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে পারেননি কখনোই। অনেকের মতে পুচ যা যা করেছেন, সেগুলো কোনো তরুণ প্রতিভারই খেলোয়াড়ি নীতির অংশ হতে পারে না। তাঁর প্রতিভা নিয়ে যখন জোর আলোচনা, তখন পুচ ভেবেছিলেন, বার্সেলোনার মতো ক্লাবে, এমনকি বার্সেলোনার প্রথম একাদশেও তাঁর জায়গা নিশ্চিত। নিজেকে পরিচর্যা তিনি কখনোই করেননি।

গাভির মধ্যে তারুণ্য আছে, প্রতিভার তো কোনো অভাবই নেই। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি মাথা নিচু করে মাটিতে পা রেখে চলতে পারেন। বড় ফুটবলারদের মতো ভয়ডরহীন ব্যাপারটাও যেকোনো কোচকেই আকৃষ্ট করতে পারে। জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষার পাশাপাশি নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টাটা তাঁর বড় গুণ।

এখনো ১৮ হয়নি, কিন্তু এরই মধ্যে গাভি নিজের প্রতিভার প্রমাণ যেভাবে রাখছেন, যেভাবে বার্সার জার্সিতে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেটি দুর্দান্ত। এভাবে চালিয়ে যেতে পারলে বার্সেলোনা যে আগামী ২–৩ বছরে দুর্দান্ত এক খেলোয়াড় পেতে যাচ্ছে, সেটি না বললেও চলে।

বার্সেলোনার কোচ হিসেবে ডাগআউটে আছেন জাভি হার্নান্দেজ। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্লে মেকার। সেই জাভি তাঁর এই তরুণ প্রতিভার শৈলীতে মুগ্ধ। সাড়ে ১৭ বছর বয়সেই জাভির মতো কোচের চোখে পড়ে যাওয়ার অর্থ গাভি বিশেষ কিছুই। জাভি কিছুদিন আগেই বলেছিলেন ‘গাভি আমাকে তাঁর খেলা দিয়ে অবাক করেছে।’ তিনি একটা সংবাদ সম্মেলনে গাভিকে যেন বার্সেলোনা বিক্রি করে দেওয়ার কোনো চিন্তা না করে, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেছিলেন। গাভি নিজেও যেন বার্সা ছেড়ে না যান, সে কারণে গাভি যে তাঁর পরিকল্পনায় পুরোমাত্রায় আছেন, সেটি বলে দিয়েছিলেন। তিনি গাভিকে দলের প্রতি অবদান রেখে যেতে বলেছিলেন। সেটি মাঠেও হতে পারে, কিংবা মাঠের বাইরেও।

তবে উন্নতির জায়গা গাভিরও আছে। বয়সের কারণেই হোক কিংবা অন্য কারণে, প্রতিপক্ষকে ট্যাকলের সময় অযথাই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে, বাজে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখছেন অযথাই। তাঁর পুরো প্রতিভা থেকে এতটুকু খামতি বের করে নিলে এ তরুণ পরিপূর্ণ ফুটবলারই।

এখনো পর্যন্ত গাভিকে নিয়ে সে ধরনের আলোচনা নেই। তবে এটা নিশ্চিত, সামনে তাঁকে নিয়ে অনেক কিছুই লেখা হবে। ততদিন বার্সেলোনার সমর্থকেরা আগামীর এ প্রতিভাকে অবলোকন করতে থাকুন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker