ক্রিকেট

হৃদয় কাঁপিয়ে জিতলো বাংলাদেশ

কাঁপিয়েছেন হৃদয়। কেঁপেছে বাংলাদেশি সমর্থকদের হৃদয়ও। মাত্র ১২৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে যে পরিমাণ নাটকীয়তা হয়েছে সেটা বোধহয় কেউ কল্পনাও করেননি। খুব সহজ টার্গেট ভাবলেও লঙ্কানদের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে বেশ ভুগতে হয়েছে টাইগার ব্যাটারদের। তবে, শেষ পর্যন্ত সেই মাহমুদউল্লাহ-ই। তার হাত ধরেই শেষ পর্যন্ত জয়ের বন্দরে পৌঁছেছে টাইগাররা।

তবে, এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক নির্দিষ্ট করে কাউকেই বলা যাবে না। কারণ, বল হাতে শুরুতে আঘাত হেনেছেন তাসকিন। এরপর মোস্তাফিজের জোড়া আঘাতের পরে ক্যামেরা নিজের দিকে নিয়েছেন রিশাদ। টপাটক দুই বলে ২ উইকেট নেয়া রিশাদ মোট নিয়েছেন ৩ উইকেট। ফিজ আর তার কল্যাণেই এত অল্প রানে আটকা পরে লঙ্কান সিংহরা।

আবার ব্যাটিংয়ে নেমে হৃদয়ের টানা তিন ছক্কাকেও ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বরং বলা চলে, হৃদয়ের ওই তিন ছক্কাই বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছিল জয়ের দ্বারপ্রান্তে। অন্যান্য ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে সবশেষে আবার সেই মাহমুদউল্লাহ-ই ত্রাতা হয়েছেন বাংলাদেশের। হারের শঙ্কা যখন উঁকি দিচ্ছে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে, তখনই ছক্কা হাঁকিয়ে লঙ্কান সমর্থকদের উল্লাস থামিয়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।

এদিন টস জিতে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে পাঠায় শ্রীলঙ্কাকে। তার করে ১২৪ রান। ১২৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৩০ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগাররা।

ইনিংসের তৃতীয় বলে ধনাঞ্জয়াকে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন ওপেনার সৌম্য। ক্যাচ নিয়েই বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন হাসারাঙ্গা। তিন বলে শূন্য করে বিদায় নেন তিনি। বাংলাদেশ দলীয় ১ রানে হারায় প্রথম উইকেট।

এরপর ক্রিজে তানজীদের সঙ্গী হয় লিটন। দ্বিতীয় ওভারে আবারও আঘাত হানে নুয়ান থুসারা। এবার সোজা বোল্ড হয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার তানজিদ তামিম। করেন ৬ বলে ৩।

এরপর টাইগার অধিনায়ককে নিয়ে দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করছিলেন লিটন দাস। তবে, পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে আবারও নুয়ান থুসারার আঘাত। এবার তার শিকার বাংলাদেশ অধিনায়ক। ড্রাইভ করতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। খুব সহজেই ক্যাচটি লুফে নেন আসালাঙ্কা। ১৩ বলে ৭ রানেই শান্ত হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়ে শান্তকে।

২৮ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তখন উইকেটে থেকে আশার পালে সাহস যোগান তাওহিদ হৃদয় ও লিটন দাস। এই জুটিতে জয়ের পথটা সহজ করে ফেলে বাংলাদেশ।

মোট ৪ ছক্কা ও ১ চারে ২০০ স্ট্রাইকরেটে ২০ বলে ৪০ রান করেন হৃদয়। এরমধ্যে হাসারাঙ্গাকে টানা তিনটি ছক্কা মারেন তিনি। পরের বলেই অবশ্য আউট হয়ে ফেরেন সাজঘরে। তার বিদায়ের পর ফেরেন লিটনও। ৩৬ রান করে হাসারাঙ্গার এলবির ফাঁদে পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার।

দুই সেট ব্যাটার ফেরার পর হারতেই বসেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিজে থেকে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। জয়ের পথে তিনি করেন ১৬ রান। তানজিম সাকিব এক রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন অন্যপ্রান্তে।

লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন নুয়ান থুসারা। হাসারাঙ্গা নেন ২ উইকেট। বাকি দুই উইকেট একটি নিয়েছেন ধনাঞ্জয়া ও অন্যটি নেন পাথিরানা।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দেশসেরা পেসার মোস্তাফিজ ও উদীয়মান লেগস্পিনার রিশাদের সমান ৩টি করে উইকেটে লঙ্কানদেরকে অল্প রানেই থামিয়ে দেয় টাইগাররা। শুরুতে বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হলেও এই দুই টাইগার বোলারের ৬ আঘাতে বেশিদূর যেতে পারেননি লঙ্কান ব্যাটাররা। থামতে বাধ্য হয় মাত্র ১২৪ রানেই!

এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ৬ ওভারে স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটে ৫৩ রান তোলে লঙ্কানরা। তবে, পরের ১৪ ওভারে মাত্র ৭১ রান নিতে পারেন তারা। হারায় ৭ উইকেট।

এ ম্যাচে, রিশাদের ঘূর্ণি জাদু আর মোস্তাফিজ-তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দুর্দান্ত কামব্যাক করে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে টাইগার বোলাররা। ইনিংসের শুরুতে বাউন্ডারির পসরা সাজালেও মাঝে একটি বাউন্ডারির জন্য শ্রীলংকাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৩ বল!

দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন নিশাঙ্কা। আর কোনো ব্যাটার কার্যকরী ইনিংস খেলতে পারেননি। বাংলাদেশের হয়ে রিশাদ-মোস্তাফিজ নেন ৩টি করে উইকেট। তাসকিনের জোড়া আঘাতের পাশাপাশি তানজিম সাকিব শেষ ওভারে তুলে নেন ১টি উইকেট। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন রিশাদ হোসেন।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker