ক্রিকেট

অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর তামিমের

তামিম ইকবাল কি আর টি-টোয়েন্টি খেলবেন? গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বহুল আলোচিত প্রশ্ন এটি। যার উত্তরে বিসিবি সভাপতি থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অনেকে অনেক উত্তর দিয়েছেন।

কিন্তু খোদ তামিম ছিলেন নিশ্চুপ। সবদিক থেকে উত্তর আসতে দেখে তামিম নিজেই বলে বসলেন, ‘আমার সিদ্ধান্ত আমাকে বলতে দিন।’ এমন বক্তব্য দিয়েও তামিম টি-টোয়েন্টি নিয়ে বলছিলেন না কিছুই। তামিমের দেওয়া ভাষ্যমতে, এই ক্রিকেটারের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ জানা যাবে চলতি বছরের আগস্ট মাসে।

তবে তার আগে চলতি জুলাই মাসের ৪ তারিখে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে এই ক্রিকেটার আচমকা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে পোস্ট করেন। মুহূর্তে সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে গেলে আবার মিনিট দশেকের মধ্যে সেটি মুছেও দেন তামিম।

অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে তামিমের পোস্ট। যেটি পরে মুছে দিয়েছিলেন।

তবে ভক্ত-দর্শকদের সঙ্গে সেই অনুমানের খেলা বেশি দিন চালিয়ে গেলেন না তিনি। অবশেষে নানান জল্পনা-কল্পনা শেষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণাটা দিয়েই দিলেন তামিম ইকবাল খান। ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষে টাইগার জার্সিতে ৭৮ ম্যাচ খেলে বিদায় নিলেন দেশসেরা এই ওপেনার।

নিজের পোস্টে তামিম লেখেন, ‘আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আজকে থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে বিবেচনা করুন। ধন্যবাদ সবাইকে।’

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের জার্সিতে ৭৮ ম্যাচে ১১৬.৯৬ স্ট্রাইক রেটে ১৭৫৮ রান করা তামিম অবশ্য ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে আর মাঠে নামেননি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৩ বলে ৪১ রানের ইনিংস হয়ে থাকলো বাংলাদেশের জার্সিতে তামিমের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ইনিংস।

এর মধ্যে জাতীয় দলের হয়ে ৭৪ ম্যাচে ১৭০১ এবং বিশ্ব একাদশের হয়ে ৪ ম্যাচে ৫৭ রান আছে তামিমের নামের পাশে।

টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে তামিমের পোস্ট

দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেও বাংলাদেশের জার্সিতে এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস থাকছে তামিমের দখলেই। টাইগার ক্রিকেটারদের মধ্যে এই ফরম্যাটে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানও তামিম ইকবাল। ওমানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের গ্রুপ স্টেজে তামিমের ব্যাট থেকে এসেছিল অপরাজিত ১০৩ রানের ঝড়ো এক ইনিংস।

এ ছাড়াও লম্বা সময় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির বাইরে থাকলেও টাইগারদের মধ্যে এই ফরম্যাটে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিকও বাংলাদেশের এই ওয়ানডে অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাকিব আল হাসানের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭৫৮ রান তামিমের। মাহমুদউল্লাহ ২০৪৩ এবং সাকিব ২০১০ রান নিয়ে এই তালিকায় যথাক্রমে এক ও দুইয়ে আছেন।

এদিকে টি-টোয়েন্টিতে বড় দলের বিপক্ষে খুব একটা সফলতার মুখ দেখেননি তামিম। ১৫ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তামিম সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট পেয়েছেন ওমানের বিপক্ষে। দলটির বিপক্ষে ১ ম্যাচ খেলে ৬৩ বলে ১০ চার ও ৫ ছয়ে ১৬৩ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত ১০৩ রান করেছিলেন তামিম।

অপরদিকে গড়ের দিক থেকে তামিমের সবচেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ডস। তাদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচে ২০২ গড়েই ২০২ রান করেছিলেন এই টাইগার ওপেনার। অন্যান্য দলের মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৯০ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৫৭ রান করেছিলেন তামিম।

এই ফরম্যাটে ২০২০ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলার পর বিশ্রাম এবং ইনজুরি ইস্যুতে লম্বা সময় বাইরে থাকায় ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য নাঈম শেখ কিংবা লিটন দাসের মতো ওপেনাররা সামনে চলে আসে। ফলে গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজ থেকে দল থেকে সরে দাঁড়ান তামিম।

পরবর্তীতে এই ওপেনারকে ফেরানোর জন্য সম্ভব সব চেষ্টা করেছিল বিসিবি। বিভিন্নবার আলোচনায় বসেছে এই ওপেনারের সঙ্গে। তবুও আর মন গলেনি তামিমের। এই বছরের জানুয়ারিতে বিপিএল শুরুর ঠিক আগে অবসরের ঘোষণা না দিয়ে বরং এই ফরম্যাট থেকে ছয় মাসের বিরতি নেন তামিম।

সেই সময় জানিয়ে দেন ছয় মাস পরে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই জানিয়ে দেবেন তিনি। অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নিজের প্রিয় ওয়ানডে ফরম্যাটে ক্যারিয়ারের পঞ্চমবারের মতো ম্যান অব দ্যা সিরিজের পুরস্কার নিয়ে টি-টোয়েন্টি থেকে তামিম অধ্যায়ের ইতি টানলেন তিনি নিজেই।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker