ধর্ম

যারা সমাজের শান্তি নষ্ট করে তারা যুগে যুগে অভিশপ্ত

মাহফুজ হাসান, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

অশ্লীল গালিগালাজ, অন্যের জমি দখল, অসহায়ের উপর জুলুম, শালিস দরবারে টাকার বিনিময়ে অপরাধির পক্ষ নেওয়া, সুদ, ঘুষ, অন্যকে বিপদে ফেলে সুকৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ক্ষমতার দাপটে নিরিহ মানুষকে শারিরিক আঘাত করা, দালালীসহ সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করার মতো এমন লোকের এখন অভাব নেই।

অথচ ভ্রাতৃঘাতী সঙ্ঘাত, হানাহানি, অপতৎপরতা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এসব কাজে কোনো প্রকার সহযোগিতা করা, দূর থেকে কোনো প্রকার ইন্ধন যোগানো, বিভেদের পালে হাওয়া যোগানো কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। মুসলিম সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ জেগে উঠে মহান আল্লাহ তায়ালার অসীম রহমত ও দয়ায়। এখন কেউ যদি এমন সব তৎপরতার সাথে জড়িয়ে যায়, যে কারণে মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়ে সংঘাত উস্কে উঠে বিভেদ তাহলে আল্লাহ তায়ালার কাছে সে একজন জঘন্য অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে। লোক সমাজেও তারা হয় ঘৃণিত। 

মূলকথা, সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এমন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, অপরাধমুক্ত কোনো সমাজ নেই। সব সময় সব সমাজে কম-বেশি অপরাধ ছিল, থাকবে। যে সমাজ যতখানি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে সমাজ ততখানি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

সমাজ বিনির্মানে কাজ করা মানুষের সংখ্যা কিন্তু বেশি। অন্যদিকে সমাজ বিনষ্টকারী অপমানুষ থাকে একটা সমাজে হাতেগোনা কয়েকজন। কিন্তু শান্তি প্রিয় মানুষগুলি চাইলেই এদের প্রতিহত করে সমুচিত জবাব দিতে পারে তবুও দেয়না কারণ নষ্ট পথভ্রষ্ট মানুষেরা ঝগড়া বা বিশৃঙ্খলা করে আরাম পায়,আর সভ্য মানুষে মনে করে কঠিন প্যারা।

আজকের সমাজে কতিপয় মানুষ আছে যাদের কাজই হলো দ্বন্দ্ব লাগানো। সমাজে এক ধরনের মানুষ আছে এই ঝগড়া লাগিয়ে আনন্দ পায়। এর মধ্যে নিজেদের আয়-উন্নতি অনুসন্ধান করে। বিশেষ করে কতিপয় রাজনীতিবিদ,মুখোশধারী,আইনবিদ এরা এতটাই নোংরা মানসিকতার যে, তারা চেষ্টা করে যে কোনোভাবে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যেন ঝগড়া লেগেই থাকে। তারা সমাধানের পথে না গিয়ে কিভাবে ঝগড়া আরো বাড়বে, তার চেষ্টা করে।কারন ঝগড়ার ভেতরে মিষ্টির রস খুঁজ এই মানুষেরা।

কিন্তু কোনো কারণে ঝগড়া হলে অন্য ঈমানদারদের কাজ হলো সেটা মিটিয়ে দেয়া। দূর করা। সমঝোতা করে দেয়া। যে কোনোভাবেই হোক ভাইয়ে-ভাইয়ে, সমাজে-সমাজে, পাড়ায়-পাড়ায় ছড়িয়ে পড়া ভুল বোঝাবুঝি, রেষারেষি, আক্রোশ, প্রতিহিংসা ইত্যাদি বিষয়গুলো দূরীভূত করা। এটা ঈমানী দায়িত্ব। অনেক পুণ্যের কাজ। আমাদের সমাজে কিছু ইবাদতগুজার মানুষকে দেখা যায়, যারা বাহ্যিকভাবে মনে হয় খুব ভালো মুমিন, হাতে তাসবীহ, প্রথম কাতারে নামায, অথচ তার ভেতরটা থাকে খুবই অপরিষ্কার। এরা সমাজে শুধু পেজগি লাগায়। ঝগড়ায় ইন্ধন দেয়।

জানা যায়- পবিত্র কুরআন এ জন্যই ঘোষণা করেছে যে, তোমাদের মধ্যে সেই অতি উত্তম যে তাকওয়াবান। তাকওয়াবান বলতে স্বশাসিত মানুষকে বোঝায়। আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী মানুষকে বোঝায়। যে অন্যায়কে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয় না। নিজে অন্যায় করে না, কেউ অন্যায় করলে সেটা প্রশ্রয় দেয় না। উপরন্তু কোথাও অন্যায় হতে দেখলে তা সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।

আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভালো মানুষ সাজতে পছন্দ করি, কিন্তু ভালো মানুষ হতে পছন্দ করি না। অন্যের দোষ ধরতে অভ্যস্ত হলেও নিজের দোষ দেখতে পাই না।

অপরাধ প্রতিকারের জন্য সচেতনতামূলক ব্যবস্থা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। যেমন: সামাজিক আন্দোলন, অপরাধীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দান বা সঙ্গ দেয়া থেকে বিরত থাকা, দুর্নীতি রোধ এবং আইনের শাসন নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে অপরাধের বিরুদ্ধে সচেনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।এ জন্য সঠিক তথ্য প্রমান দিয়ে প্রশাসনকে সহায়তার মাধ্যমেও সহজে কমতে পারে সামাজিক অপরাধ।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker