ধর্ম

অন্যের সমালোচনা নিজেকেই হেয় করে

"বল তুমি তিক্ত কথা কর পরের গুণ বিচার,
শুনে সামনে কয়না কিছু অন্তরালে কয় জোকার "

হে, সমালোচকদের মানুষ জোকারের সাথেই তুলনা করে কিন্তু সে নিজে হয়তো কখনোই বোধগম্য নয়।

প্রতিটি যায়গায় সমালোচক আছেই হোক সেটা অফিস-আদালত,সমাজ সংসার,বা যেকোন পরিবেশ যেখানে অন্তত মানুষের উপস্থিতি আছে।তবে বিশিষ্টজনরা বলে থাকেন সমালোচনা করতেও যোগ্যতা লাগে।যোগ্য ব্যক্তিদের সমালোচনা হয় কিছুটা তুলনামূলক, কিছুটা গঠনমূলক। তাদের সমালোচনা আট-দশটা স্বার্থবাদী,পরশ্রীকাতর,  জ্ঞানহীন মানুষের মতো হয় না।

যাদের নূন্যতম ভদ্রতা নেই তারাই মানুষের সমালোচনা করে থাকে বেশি। কারণ,অফিসের কাছে, সমাজের কাছে কিংবা দলের কাছে ঐ মানুষকে হেয় করার জন্য। সবার  কাছে ঐ মানুষকে খারাপ চোঁখে দেখার জন্য। তারা কখনো গঠনমূলক সমালোচনা করে না। তাদের সমালোচনায় হয় সবসময় অশ্লিল ও নোংরা এবং অযুক্তিক ভাষার ব্যবহার। তারা মানুষকে আঘাত দিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে।

তারা ঐ ব্যক্তির যোগ্যতার ধারে কাছেও যেতে পারে না বলে সমালোচনা করে থাকে। ঐ ব্যক্তি ভালো কাজ করলেও সমালোচনা করে,খারাপ কাজ করলেও সমালোচনা করে। একমাত্র ঐ ব্যক্তিকে সাফল্যর শীর্ষ থেকে নিচে নামানোর জন্য।

কবির ভাষায়,,

ওহে ভেজাল ওহে নির্বোধ, 
জিন্দেগী তোর কর্দমাক্ত তুই হে নিন্দুক।

কোনো ব্যক্তির সাফল্য, সুযোগবোধ বা একটু শীর্ষে উঠতে দেখলেই  কিছু স্বার্থান্বেষী লোকেদের মনে হিংসা লেগে যায়। তারা ভাবে কিভাবে ঐ ব্যক্তিকে নিচে নামানো যায়।কিভাবে ঐ ব্যক্তির স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ নষ্ট করা যায়,অফিস কোনো ফোরাম বা সমাজে হেয় করা যায়। তারপর থেকে শুরু হয় তাদের সমালোচনার ঝড়।

কিছু মুখোশদারী মানুষ ভাবে, তাদের তো নিজেদের যোগ্যতা নেই ঐ জায়গায় পৌছার তাই তারা যোগ্যতা সম্পূর্ণ মানুষদের পিছে লেগে পড়ে তাকে কিভাবে টেনে হিঁচড়ে নামানো যায়।

কথায় আছে, সমাজে ভালো কাজ করতে গেলে অনেক বাঁধা-বিপত্তি আসে বা অনেক বাঁধা পেরিয়ে কাজটি করতে হয়। আপনি যতো উপরে উঠতে চেষ্টা করবেন আপনাকে ততো নিচে নামানোর চেষ্টা করবে তারা। তাই, আপনার সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা আপনি যাবেন কোথাও থামবেন না বা পিছপা হবেন না। ভালো কাজে বাঁধা আসবেই যতোটা না খারাপ কাজে আসে।

হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক ও সাংবাদিক জনাব আশরাফ আহমেদ (সোহাগ)  বলেন, সমালোচনা করা সহজ, সমালোচিত হওয়া কঠিন। এই গভীর তত্ত্বের মর্মটা  উপলব্ধি করতে গিয়ে কোনো একটা জায়গায় থামতে হয়। কারণ জীবন জমাট বাধা বরফের মতো কঠিন এক অদেখা দহনের প্রতীক, যা মানুষের বুকে তিলে তিলে ক্ষত তৈরি করে মানুষকে বুঝিয়ে দেয় সে মানুষের দ্বারা কতটা সমালোচিত।

হোসেনপুর সরকারি কলেজের অধ্যাপক জনাব এবিএম ছিদ্দিক চঞ্চল বলেন,সমালোচনার দুষ্ট চক্রে নিগৃহীত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত হয়তো এভাবেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষটা   সমালোচিত হতে হতে একদিন বিশ্বময় আলোচিত হয়ে উঠে। আলোচিত হতে হতে একদিন আলোকিত হয়ে উঠে। কেননা যে মানুষ যত কোনঠাসা সে মানুষের ভিতরের পুঞ্জীভূত ঘুমন্তশক্তি তত আপন শক্তিতে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা বেশি। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতি চিনে, জানে ও বুঝে সেই নেতিবাচক শক্তিতে ভর করা বিবেকহীন সমালোচকদের। তাদেরও প্রকৃতি সীমা লঙ্ঘনের সময় দেয়  টুকরো টুকরো অস্থিরতার ট্রাজেডির উপাখ্যান লিখে।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জনাব সিরাজ উদ্দীন (এম এ) বলেন, সব সমালোচনা, সমালোচনা হয়ে উঠেনা | যে সমালোচনায় স্বার্থ থাকে, ঈর্ষা থাকে, ঘৃণা থাকে, যুক্তিহীন ক্ষোভ থাকে, তা কখনো সমালোচনা হয়ে উঠেনা | বরং তা হয়ে উঠে দীপ্যমান সূর্যের আলোক রশ্মিকে টেনে ধরার মতো অসহিষ্ণুতা। নিজে না পারার অক্ষমতা থেকে হতাশা আর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়া মানুষের তৈলচিত্র যেন তা।

“আমার রাজ্যে আমি রাজা রুখবে আমায় কে?
কারো ক্ষতি নাহি করি চাইনা কাউরে কষ্ট দিতে।”

 সূর্যের আলোকে থামিয়ে দিয়ে তার গতি রোধ করবে এমন সাহস কি সমালোচকদের আছে? সূর্যের আলো মানে সমালোচিত মানুষ। যে পুড়ছে প্রতিদিন সমালোচকদের অর্থহীন কথায়, যুক্তিহীন মনস্তত্বে। এপিজে আব্দুল কালাম আজাদ পুড়ে পুড়ে জীবন গড়া একটা মানুষ। মায়ের হাতের পোড়া রুটি খেয়ে বাবার কাছে যিনি শিখেছেন সমালোচনা নয়, উদারতা আর মহত্ব দিয়ে  জীবনবোধ তৈরী করতে হয়। তিনি ভেবেছেন তাই একটু অন্যভাবে।  বলতেও পেরেছেন মন খুলে এভাবে  “তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখো”।

হযরত মাওলানা মুফতি আনাছ সাহেব জানান, পবিত্র কোরআনে কারীমে উল্লেখ আছে, পরচর্চা বা সমালোচনা শিষ্টাচারবিরোধী এবং অসামাজিক কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা-১০৪ হুমাজা, আয়াত: ১০৯)। 

তিনি আরো বলেন, কারও সমালোচনা করা একটি ভয়ংকর অপরাধ ও কবিরা গুনাহ। পবিত্র কোরআনে গিবত করাকে আপন মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১২)। 

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বলেন, সমালোচনা করার প্রথম ও প্রধান এবং উত্তম বিষয় হলো আত্মসমালোচনা করা। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান, যে নিজের সমালোচনা করে।’ (আবুদাউদ)।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker