জাতীয়

যেসব শর্ত দিয়ে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি চায় ভারত

বিগত দেড় দশক ধরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্ত গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই সম্পর্কে চির ধরেছে। সম্পর্ক ঠিক করতেই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব কিছু শর্ত জুড়ে দিতে এসেছিলেন ঢাকায়। কিন্তু ভারক সরকারের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে যেরকম অভ্যরর্থনা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন সেখানে সম্পর্কের উন্নতি করতে এসে তার ছিটেফুটোও পাননি বিক্রম মিশ্রি।

গত সোমবার  ঢাকায় এসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি একটি গুরুপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। যদিও ওই বৈঠকের পূর্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তবুও শেষ পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিকে বিষয়ে সম্মত হয়ে বৈঠকে অংশ নেন। তবে ভারতের পক্ষ থেকে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কিছু শর্ত আরোপ করে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে, ঢাকার বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করলেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি কিন্তু সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্ন নেননি। দিল্লিতে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, সম্পর্ক এখনও স্বাভাবিক হয়নি এই বার্তাটা দিতেই ভারত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রাজি হয়নি; বরং তাদের দেওয়া সব শর্ত পূরণ হলে তবেই আবার পুরোনো প্রটোকলে ফেরা সম্ভব, এটাই বোঝাতে চেয়েছে!

শর্তগুলো হলো-

এনগেজমেন্ট হবে লিমিটেড: ভারত একটা জিনিস ঢাকার কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা বাংলাদেশের একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কখনোই ‘ফুল এনগেজমেন্টে’ যাবে না। দিল্লির বক্তব্য হলো, ভারতে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলেও বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের সাংবিধানিক ভিত্তি বা নির্দিষ্ট ম্যান্ডেট কী, সেটাই পরিষ্কার নয়! 

ভারত ঢাকাকে জানিয়ে দিয়েছে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গেই নেওয়া হবে– তার আগে নয়। আর যতদিন না এটা হচ্ছে ততদিন বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা আমলা পর্যায়ের বৈঠক হতে পারে, কিন্তু মন্ত্রীরা কোনও গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা বা চুক্তি করবেন না। তবে যেসব চুক্তি আগে থেকেই বহাল আছে সেগুলো যেমন চলছিল চলবে।

হিন্দুদের সুরক্ষা, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সুবিচার: ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এই বার্তাই ঢাকাকে দিয়েছেন যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলো যদি অন্তর্বর্তী সরকার বেমালুম অস্বীকার করতে থাকে, তাহলে তা দিল্লির কাছে কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

ভারতের সংবাদমাধ্যম যে এই ঘটনাগুলো বেশ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বা অতিরঞ্জিত করে পেশ করছে তা অবশ্য তিনিও প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন, কিন্তু তার মানে এরকম কোনও ঘটনাই ঘটছে না বলে ঢাকা যে পাল্টা দাবি করছে, সেটিও দিল্লি মানতে পারছে না।

শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ উত্থাপন নয়: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে বিগত কয়েক মাস ধরে একটি চরম অস্বস্তির বিষয় হয়ে রয়েছে ভারতের মাটিতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি এবং সেখান থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া তার নানা রাজনৈতিক বিবৃতি।

ভারত বলছে, শেখ হাসিনা ভারতের অতিথি এবং একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে তিনি ভারতে সাময়িকভাবে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন, যা মঞ্জুর করা হয়েছে। তিনি ভারতে গৃহবন্দিও নন, কোনও রাজনৈতিক বন্দিও নন। কাজেই বাইরের জগতের সঙ্গে তার সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করারও প্রশ্ন ওঠে না। এখন সেটাকে কাজে লাগিয়ে তিনি যদি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন, তাহলে ভারতের সেখানে সত্যিই করার কিছু থাকতে পারে না। 

এখন ভারতের দেওয়া এই শর্তগুলো বাংলাদেশ কতটা মানতে রাজি হবে সেটা আগামী দিনে বোঝা যাবে। ঢাকার পক্ষ থেকেও যেসব প্রত্যাশা বা দাবিদাওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে ভারত কী মনোভাব নেয়, সেটা বুঝতেও কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের রূপরেখায় উন্নতির আভাস দেখা যাবে, নাকি তলানিতে হাবুডুবু খাবে, তা নির্ভর করবে এই পারস্পরিক শর্তগুলো উভয়পক্ষ মানতে রাজি হয় কিনা তার ওপর।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker