জাতীয়

জামিনে মুক্ত হলেন আলোচিত ক্যাসিনোকাণ্ডের ১৩ জন

পাঁচ বছর আগে ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীমসহ গ্রেপ্তার ২১ জনের বিরুদ্ধে মোট ৫৭টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৪টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

তবে মানি লন্ডারিং আইনে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া চলচ্চিত্র প্রযোজক আরমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলা এখনো তদন্ত করছে সিআইডি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

ওই সময় উপরোক্ত তিনজন ছাড়াও কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, যুবলীগের নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে (গোলাম কিবরিয়া) শামীম, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই এনামুল হক ওরফে এনু ও রুপন ভূঁইয়াসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে আটজন ছাড়া বাকি ১৩ জন জামিনে মুক্ত। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন এনামুল হক এনু, রুপন ভূঁইয়া, আবুল কালাম আজাদ ও জাহিদুল ইসলাম। কাশিমপুর ১ নম্বর কারাগারে রয়েছেন শহিদুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেন।

কাশিমপুর-২ কারাগারে রয়েছেন জি কে শামীম এবং কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি আমিনুল ইসলাম। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসে। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি খালেদ মাহমুদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়।খালেদের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়।

এর মধ্যে চারটি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। সিআইডি সূত্র জানায়, খালেদের বিরুদ্ধে তিনটি দেশে চিঠি চালাচালি করেও কোনো ফল হয়নি। তাই চার্জশিট দিতে দেরি হচ্ছে।
ওই সময় যুবলীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নামও আলোচনায় আসে।

 

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর র‌্যাব কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে সম্রাট, তার ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত চলচ্চিত্র প্রযোজক আরমানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। ওই দিন কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে সম্রাটের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে অবৈধ পিস্তল-গুলি, মাদক ও বন্য প্রাণীর চামড়া উদ্ধার করে র‌্যাব।

সেদিনই র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান। গ্রেপ্তারের পর সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। পরে সম্রাটের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং আইনে একটি করে মামলা হয়। মানি লন্ডারিং আইন ছাড়া সম্রাটের বিরুদ্ধে হওয়া বাকি তিন মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

মানি লন্ডারিং মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে সিআইডি। এই মামলায় সম্রাটের সঙ্গে প্রযোজক আরমানও আসামি। কারাগারে প্রায় তিন বছর আটক ছিলেন সম্রাট। ২০২২ সালের ২২ আগস্ট মাসে কারাগার থেকে সম্রাট জামিনে মুক্ত হন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকালে সাত সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করা জি কে শামীম আলোচনায় আসেন। খালেদকে গ্রেপ্তারের দুদিন পরই জিকে শামীমকে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতন এলাকার নিজের অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে করা তিন মামলার  অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় তিনটি পৃথক মামলা হয়। এসব মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার পর আদালতে সেগুলোর বিচার কার্যক্রম চলছে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার বাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুই দফা অভিযান চালায় র‌্যাব।

দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে ৯টি মামলা হয়। তাদের সব মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল মানি লন্ডারিং আইনের একটি মামলায় আদালত তাদের ১১ বছর করে কারাদণ্ড দেন। বাকি মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রম চলছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনটি মামলা সিআইডির তদন্তাধীন। অন্য মামলাগুলোর চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker