জাতীয়

সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আ’লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করতে হবে: কর্নেল অলি

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, স্বৈরাচারের পতনের পর জাতি-ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। স্বৈরাচারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ নতুন সরকারের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের উপর অর্পিত নির্বাহী দায়িত্ব পালনে সফলতার আশা ব্যক্ত করেন অলি আহমদ।

কর্নেল (অব.) অলি বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের এবং তাদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি রাষ্ট্রে সাজাপ্রাপ্ত ও বহিষ্কৃত বাংলাদেশি ভাইদের মুক্তি ও পুনঃনিয়োগ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।”

অলি আহমদ বলেন, “২০০৯ সাল থেকে যারা উপযুক্ত প্রমাণাদি ছাড়াই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা তুলে নিতে হবে, এবং যারা গ্রেপ্তার ও বন্দি হয়েছেন তাদের অবিলম্বে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীসহ সরকার কর্তৃক অপহৃত, নিহত ও গুম করা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।”

১৯৯৬ সালের পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যে অবৈধ ও অযৌক্তিক সংযোজন করা হয়েছে তা বাতিল করার দাবি জানান তিনি। বলেন, “এসব মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্যদের সরকারি চাবরিতে নিয়োগ বাতিল করতে হবে। স্বৈরাচারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করতে হবে।”

স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অভিযুক্ত ও পলাতক ব্যক্তিদের উপযুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করতে হবে, তাদের অবৈধ সম্পদ জব্দ করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ প্রত্যর্পণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে। বাংলাদেশের স্থল, জল বা বিমানবন্দর দিয়ে যাতে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি পলায়ন করতে না পারে বা অপরাধীরাও অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”

উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া মাত্র শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করার দাবিও জানান কর্নেল অলি।

তিনি আরও বলেন, “ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্পষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে। কমপক্ষে পরবর্তী ৪টি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য একটি কমিটি গঠন করতে হবে।”

এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, “প্রধানমন্ত্রী থেকে প্রজাতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ) শীর্ষ নির্বাহী পদে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২ বারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।”

তিনি কিছু বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানও জানান।

সেগুলো হলো- সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবিলম্বে নিজ নিজ দায়িত্বে ফেরা। প্রয়োজনে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের সাময়িকভাবে পুনর্নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।

ডিজিএফআই ও অন্যান্য আটককেন্দ্রকে আত্মসমর্পণকারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। সব অবৈধ অস্ত্র সাময়িকভাবে নিকটস্থ আইন-প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে ইস্যুকৃত সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করতে হবে, যা তদন্ত সাপেক্ষে পুনঃবহাল করা যেতে পারে।

অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত করতে বন্দর, কাস্টমস এবং সব সরকারি সেবা দ্রুততম সময়ে পুনরায় স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান কর্নেল অলি। তিনি বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে গার্মেন্টসসহ সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানাই।” প্রবাসী কর্মীদের বৈধ পন্থায় রেমিটেন্স পাঠানোর আহ্বানও জানান তিনি।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker