জাতীয়

গ্রেপ্তার বুয়েট ছাত্ররা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত নয়, দাবি অভিভাবকদের

টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৩১ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে তাহিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলার পর সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত রবিবার সন্ধ্যায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌকায় বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়।

পুলিশ বলছে, নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতি সাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার লক্ষ্যে বুয়েট শাখার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বায়তুলমাল বিষয়ক সম্পাদক আফিফ আনোয়ারের নেতৃত্বে তারা হাওরে একত্র হয়েছিলেন। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সাঈদের পাঠানো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদের অভিভাবকবৃন্দ। তারা বলেছেন, আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানরা জড়িত নয়।

আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র। কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ংকর মামলা সাজানো হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অভিভাবক আলী আহসান জুনায়েদ।

তিনি বলেন, ‘জব্দকৃত মালামাল হিসেবে কতগুলো জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ অবতারণা করা হয়েছে এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়। তারা টার্ম-ব্রেকের বন্ধে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঘুরতে ওখানে গেছে। আর টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে―এমন অভিযোগও হাস্যকর। পরে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তারা এটি পরিষ্কার করেছে যে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে প্রত্যাশিত কিছুই না পেয়ে তাদের সামনেই জব্দকৃত মালামাল হিসেবে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে তাদের মামলা সাজানোর জন্য। আমরা বুয়েট প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো ধরনের রাজনীতি এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানরা জড়িত নয়।

তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র।’

এ অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন জানিয়ে এই অভিভাবক বলেন, ‘মামলার বিবরণীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতি সাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টি আমাদেরকে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’

বুয়েট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন বাস্তবতায় গতকাল সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন অভিভাবক বুয়েটের ভিসির দেখা করতে যাই। সেখানে গিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সঙ্গে দেখা হয় এবং তাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করি। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আমাদের জানান, তাদেরও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে গতকাল বিকেল ৪টা বা ৫টার দিকে। সে সময় এ রকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে এ বিষয়টি নিয়ে যে আমরা উদ্বিগ্ন এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন সেটা জানিয়েছি আমরা।’

এই শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker