জাতীয়

প্রবাসীদের ভোটদানে আবেদনের বাকি আর তিনদিন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই ব্যবস্থায় প্রবাসী ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। গত ২১ নভেম্বর ইসি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশি সব দূতাবাস ও হাইকমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রবাসীদের আবেদনের জন্য ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ১৩ দিন চলে গেছে। আবেদনের জন্য আর মাত্র তিন দিন সময় রয়েছে।তবে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির প্রক্রিয়াটি জটিল মনে করছেন প্রবাসীরা। তাঁরা বলছেন, এতে দীর্ঘসূত্রতা ও গোপনীয়তা ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

এখানে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে গোপন মেইল বা বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করা যেত।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, প্রথমবারের মতো পোস্টাল ব্যালটের পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে এ পদ্ধতির কোনো প্রক্রিয়াই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কারণ প্রবাসীদের ভোটের বিষয়ে আইনে সে রকমই রয়েছে।

তবে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল করার দায় নির্বাচন কমিশনকেই দিচ্ছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি

পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একজন প্রবাসীকে প্রথমে তাঁর নিজ এলাকার রিটার্নিং অফিসারের কাছে তফসিল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে ভোট দেওয়ার আবেদন করতে হবে। রিটার্নিং অফিসার আবেদন পাওয়ার পর ভোটারের কাছে ভোট দেওয়ার যাবতীয় কাগজপত্র ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠাবেন। এরপর ভোটারকে নিয়ম অনুযায়ী ভোট দিয়ে ডাক বিভাগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে তা ফেরত পাঠাতে হবে। ভোটার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠাতে না পারলে তাঁর ভোট বাতিল হয়ে যাবে।

প্রবাসীরা যা বলছেন

প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির প্রক্রিয়াকে জটিল বলেছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে লন্ডনপ্রবাসী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের পোস্টাল সিস্টেম আর বাইরের এই সিস্টেমের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। বাইরের সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাহলে বলব যে আমরা এখানে অনেক দুর্বল। বাংলাদেশ থেকে পোস্ট করা জিনিস আমার কাছে আসতে কতটা সময় নেবে, তা জানি না। তবে কাছে আসার পর সেটি পৌঁছাতে তেমন সময় নেবে না। কিন্তু সেটা বাংলাদেশে পৌঁছার পর কতটুকু দ্রুত ও নিরাপত্তার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কাছে গিয়ে পৌঁছাবে, তা বলা মুশকিল। দেখা গেল, ভোটের এক দিন পর আমার ভোট তাদের কাছে পৌঁছাল। তখন আমার ভোটটা বাতিল হয়ে যাবে।’

সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে সৌদিপ্রবাসী মাসুদ আল মাহদী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বা দূতাবাস থেকে সে রকম কোনো প্রচার নেই। আমাদের পরিচিত বেশির ভাগ বাংলাদেশি জানেন না যে তাঁরা এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এটার আবেদনের জন্য যে সময় দেওয়া হয়েছে, তা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এই স্বল্প সময়ে বেশির ভাগ বাংলাদেশি ভোটের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। সময়টা আরো বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে পদ্ধতি আরেকটু সহজ করলে ভালো হতো।’

মিসরপ্রবাসী মুজাইল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে ডাকযোগে কেন ভোট দিতে হবে, বুঝলাম না। এখন আরো স্মার্ট পদ্ধতিতে গোপনীয়তা মেনে ভোট নেওয়া সম্ভব। যে আবেদন ই-মেইলের মাধ্যমে করেছি, তা রিটার্নিং অফিসারের নজরে পড়েছে কি না, বুঝব কী করে? পুরো বিষয়টির মধ্যে জটিলতা রয়েছে।’

তবে আইনের এই প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বলে জানান নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এটা জটিল প্রক্রিয়া নয়। এটি খুব সহজ পদ্ধতি। আবেদন করলে তাঁদের ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাঁরাও ভোট দিয়ে আবার ব্যালট পেপার ডাকযোগে পাঠিয়ে দেবেন। এই প্রক্রিয়া আইনে আছে, তাই এটি এখন পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। পরিবর্তন করতে হলে সংসদের আইন পরিবর্তন করতে হবে।’

এ ব্যাপারে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার একটা অধিকার রয়েছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের আরো আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল। এখন হয়তো দেরি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সম্ভবত কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker