স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে মায়ানমার দেশের সাথে মিলে মিশে আছি। আমরা কারোর সাথে যুদ্ধ চাই না। আমরা সবাই মিলে মিশে থাকতে চাই। মায়ানমারের যুদ্ধ তাদের অভ্যন্তরীন কোন্দল। আরাকান রাজ্যের অস্ত্রধারীরা তাদের দাবিদাবার বিষয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমরা যতটুকু জানতে পারেছি, আমাদের দেশের সীমান্তবর্তী আরাকান আর্মি নামের এক লোকের নেতৃত্বে মায়ানমার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যুদ্ধ তাদের ভিতরেই হচ্ছে।
কোন কোন সীমান্তে যুদ্ধ হচ্ছে। এটা আমাদের করার কিছু নেই। আমাদের সীমান্তে বিজিবি যতটুকু নজরদারিতে রয়েছে, যাতে আরাকান আর্মি কিংবা মায়ানমার আর্মি আমাদের অভ্যন্তরে ঢুকতে না পারে তার জন্য বিজিবি সদস্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুধু আর্মি নয়, কোন লোকই আমাদের ভিতরে ঢুকতে পারবে না সেরকমই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, হিন্দু ধমার্ম্বলীদের শারদীয় দূগার্ পূজায় যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সেই সাথে পুলিশের টহল জোড়দার করা হয়েছে। এতে কোন পূজার্ মন্ডবে কোন সমস্যা হবে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষণ একাডেমিতে সাধারণ আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণ (পুরুষ প্রথম
দাপ) সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠাণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এসময় আরো বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ, সুশৃঙ্খল ও জনসম্পৃক্ত বাহিনী। স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি প্রতিটি ক্ষেত্রে বাহিনীর সদস্যরা সবসময়ই কর্মদক্ষতা এবং সফলতার পরিচয় দিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত এ বাহিনী দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট ও সুনামগঞ্জে যে বন্যা হয়েছিল, সেখানেও আনসার-ভিডিপি সদস্যরা উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে। প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে।
বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মোট ৩২ হাজার ৩৫৮টি পূজামণ্ডপে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৬৮৪ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যাদের অবদান অনস্বীকার্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এ বাহিনীর বর্তমান সরকারের সময়ে পোশাক প্রবর্তন, পারিবারিক রেশন বৃদ্ধি ও সেবামূলক কাজের কর্মকর্তাদের জয় পেনশন, অন্যান্য পদের মনো কর্মকর্তাদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একটি বিশেষায়িত গার্ড ব্যাটালি বাটালিয়ন গঠন, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের মেয়াদ হ্রাস এবং আনসার ব্যাটালিয়নের তিনটি পদবীর বেতন গ্রেডের ধাপ উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাটালিয়ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫টি ব্যাটালিয়ন সদরে আধুনিক অবকাঠামো গড়ে চলে ব্যাটালিয়নের রূপ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোর উন্নয়নও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমান সরকার ইতোন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ৪০টি অস্ত্রাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা, কর্মচারী, ব্যাটালিয়ন আনসার, সাধারণ আনসার ভিডিপি টিডিপি সদস্য-সদস্যাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ, আধুনিক ও যুগোপযোগী কারিগরি প্রশিক্ষণ – পদোন্নতিসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বাহিনীর কর্মকর্তা ও অন্যান্য পদবীর সদস্যদেরকে বর্তমানে তুরস্কে প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ আনসার (১ম ধাপ) মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ৯৯৫ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। ৭০ দিন ব্যাপী কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় আপনারা কর্মরত হতে যাচ্ছেন। এ জন্য আমি আপনাদের আন্তরিক। অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি বিশেষ অভিনন্দন জানাচ্ছি আজকের এ প্রশিক্ষণ সমাপনীতে সেরা চৌকস, ডিল ও ফায়ারার হিসেবে কৃতিত্ব অর্জনকারী তিনজন প্রশিক্ষণার্থী সদস্যকে।
মন্ত্রী আশা করেন, প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান, মেধা, শ্রম ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আপনারা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
আমি আরও আশা করছি, বাহিনীর সুনাম এবং ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রেখে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে দেশ এবং জাতির সার্বিক উন্নয়নে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবেন। পরিশেষে, আমি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামগ্রিক সফলতা এবং অগ্রগতি কামনা করছি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাধারণ আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণে পুরুষ প্রথম ধাপে ৯শত ৯৫ জনের মধ্যে প্রশিক্ষনার্থী ড্রিলে রফিকুল ইসলাম, ফায়ারিং এ মো: নুরুল ইসলাম, চৌকস প্রশিক্ষণার্থী মো: আকরাম হোসেনের হাতে ক্রেষ্ট তুলে দেন।
মন্ত্রী সকাল ১০টায় সফিপুর আনসার প্রশিক্ষণ একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌছালে এ বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান এনডিসি, পিএসসি, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান। পরে একটি খোলা জীপে করে কুজকাওয়াজ মাঠ পরিদর্শণ করেন। কুজকাওয়াজ শেষে স্বারাষ্ট্র মন্ত্রী সাধারণ অনসার সদস্যদের উদ্যোদেশ বক্তৃতা করেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মো: আখতার হোসেন, আনসার ও ভিডিপি একাডেমির কমান্ড্যান্ট অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: সামছুল আলম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী সফিকুল আলম, উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ প্রমুখ।