আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ইউরোপীয় তিন দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি

স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে মঙ্গলবার একটি সমন্বিত সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ পদক্ষেপকে সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিধ্বংসী গাজা যুদ্ধে হামাসের জন্য ‘পুরস্কার’ হিসেবে নিন্দা করেছে ইসরায়েল।

এই তিনটি ইউরোপীয় দেশ বিশ্বাস করে, তাদের উদ্যোগের শক্তিশালী প্রতীকী প্রভাব রয়েছে, যা সম্ভবত অন্যদের অনুসরণ করতে উৎসাহিত করবে।

আয়ারল্যান্ডের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ব্যবস্থা অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, তাদের লক্ষ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির আশা বাঁচিয়ে রাখা।

তিনি ইসরায়েলকে গাজায় ‘মানবিক বিপর্যয় বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা শান্তি প্রক্রিয়ার শেষে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিলাম। তবে শান্তির অলৌকিক ঘটনাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা স্পেন ও নরওয়ের পাশাপাশি এই পদক্ষেপ নিয়েছি।’

অসলোর স্বীকৃতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইড এই পদক্ষেপটিকে ‘নরওয়ে-ফিলিস্তিন সম্পর্কের জন্য একটি বিশেষ দিন’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন।

অন্যদিকে স্পেনের মন্ত্রিসভা এই পদক্ষেপকে সমর্থন করার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেন, এটি এমন একটি দিন যা ‘স্পেনের ইতিহাসে খোদাই করা হবে’।

এর আগে স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, শান্তির জন্য স্বীকৃতি ‘অত্যাবশ্যক’। তিনি জোর দিয়ে জানান, এই পদক্ষেপ ‘কারো বিরুদ্ধে নয়, অন্তত ইসরায়েলের নয়’। এটি ‘শান্তি ও নিরাপত্তা’র মধ্যে পাশাপাশি বসবাসকারী দুটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একমাত্র উপায়।

তিনি আরো জানান, এই সিদ্ধান্তটি হামাসকে স্পেনের সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানকে প্রতিফলিত করে, যারা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের বিরুদ্ধে এবং যাদের ৭ অক্টোবরের হামলা গাজা যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল।

এর আগে গত সপ্তাহে তিনটি দেশের প্রধানমন্ত্রী এ পরিকল্পনা উন্মোচন করেছিলেন। এতে ইসরায়েলের কাছ থেকে ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে স্পেনের সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মতবিরোধ
এদিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ২৭ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে। কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিকে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে শান্তির শেষ অবলম্বন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন এবং অধিকাংশ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ বলেছে, তারা একদিন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক। তবে জেরুজালেমের মর্যাদা ও চূড়ান্ত সীমান্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চুক্তির আগে নয়।

তবে গাজা উপত্যকায় রক্তপাত ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব রাষ্ট্র দেওয়ার আহ্বানকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। মঙ্গলবারের পদক্ষেপের অর্থ হবে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৫টি এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। ২০১৪ সালে সুইডেন প্রথম ইইউ সদস্য হিসেবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। তারা ছয়টি ইউরোপীয় দেশকে অনুসরণ করেছিল, যারা জোটে যোগদানের আগেই এ পদক্ষেপ নিয়েছিল। দেশ ছয়টি হলো বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও রুমানিয়া।

ইসরায়েলি সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি আক্রমণ চালালে এক হাজার ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক ছিল। পাশাপাশি যোদ্ধারা ২৫২ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়, যাদের মধ্যে ১২১ জন এখন গাজায় রয়ে গেছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে তাদের মধ্যে ৩৭ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের নিরলস প্রতিশোধমূলক আক্রমণে গাজায় ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker