ইতিহাস ও ঐতিহ্য

পাঁচ হাজার বছরের ঐতিহ্য বয়ে চলা রাজা বিরাটের মেলা এখন উৎসবমুখর

গোবিন্দগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রাজা বিরাটের যাত্রী মেলা শুরু হয়েছে। প্রতিবছর বৈশাখ মাসজুড়ে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখ মাসের প্রথম রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে পুরো মাসজুড়ে।

স্থানীয়রা জানান, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসজুড়ে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখ মাসজুড়ে চলে যাত্রী মেলা, আর জ্যৈষ্ঠ মাসে হয় শুধু কাঠের মেলা। ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা সারা বছর ধরে তৈরি করা কাঠের দরজা, খাট, জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র বিক্রি করেন এ মেলায়। এই মেলা থেকেই আসবাবপত্র কিনে বড় বড় মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে নববধূ ও জামাইয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার রীতি আদিকাল থেকে প্রচলিত রয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট বাজারে বসে এই মেলা। প্রাচীনকাল থেকে শুরু হওয়া রাজা বিরাট মেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হিসেবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই মেলায় অংশ নেন। প্রথা অনুযায়ী, দূর-দূরান্ত থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা নতুন মাটির হাঁড়িতে ভাতের সঙ্গে করলা ও আলু সিদ্ধ করে সবাই একসাথে শতবর্ষী বটগাছের নিচে বসে সেই অন্ন গ্রহণ করেন এবং পরে হাঁড়িটি ভেঙে ফেলেন।

বৈশাখের প্রতি রবিবারে মেলার দিনে শত শত হাঁড়ি-পাতিল ভাঙা হলেও পরদিন সকালে সেগুলোর কোনো চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যায় না। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, আলু-করলার সিদ্ধ ভাত খেলে বাবা-মাসহ সকল প্রয়াত আত্মীয়-স্বজনের আত্মার কল্যাণ হয়।

মন্দির প্রাঙ্গণের শতবর্ষী বটগাছের নিচে রাজা বিরাট, তাঁর স্ত্রী সুদেষ্ণা ও পঞ্চপাণ্ডবের মূর্তি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে শরশয্যায় শায়িত ভীষ্মের মূর্তি। প্রতিদিন সেখানে নিয়মিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

পৌরাণিক কাহিনির বরাতে রাজা বিরাট মদনমোহন জিউ বিগ্রহ মন্দিরের উপদেষ্টা বলাই চন্দ্র বর্মণ জানান, প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে পঞ্চপাণ্ডব অজ্ঞাতবাসে থাকাকালে বিরাট রাজার রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন রাজ্যের বহু মানুষ অনাহারে মারা যায়। এমতাবস্থায় প্রজারা রাজাকে দেশত্যাগের অনুমতি চাইলে তিনি রাজজ্যোতিষীর পরামর্শ নেন। জ্যোতিষী গণনার মাধ্যমে জানান, যদি প্রজারা মন্দিরের সামনে আতপ চালের ভাতে আলু-করলা সিদ্ধ দিয়ে হবিষ্যান্ন গ্রহণ করেন, তবে দুর্ভিক্ষ কেটে যাবে।

রাজার নির্দেশে প্রজারা সেইভাবেই অন্ন গ্রহণ শুরু করলে ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষ কেটে যায়। সেই থেকে প্রতিবছর বৈশাখের প্রতি রবিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এই রীতিতে অংশ নিয়ে থাকেন।

গত রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের যাত্রী মেলা। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য রথিকান্ত বর্মণ জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার মেলায় জনসমাগম আশানুরূপ হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সন্তোষজনক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী রবিবার থেকে মেলা আরও জমজমাট হবে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker