গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা জামালপুর ইউনিয়নে বিনিরাইল গ্রামে প্রায় আড়াই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা তথা জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটা পৌষ মাসের শেষ দিন সকাল থেকে শুরু হয়। এই মেলাকে বিনিরাইলের উৎসব, বিনিরাইলের মাছের মেলা বলে অভিহিত করতো। কালে পরিক্রমায় মেলাটি জামাই মেলায় পরিণত হয়।
এই দিনটি আসলে এলাকার জামাইরা উৎসব মুখর ও উৎসাহ উদ্দীপনায় মেলা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যায়। এ মেলার প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা মাছ জামাইদের কেনার প্রতিযোগিতা।
এলাকার হাফিজুল্লাহ শেখ জানান, প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ এ মেলা বসে। দিনটির জন্য উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ সারা বছর অপেক্ষায় থাকে। কারণ জামাই মেলার মূল আকর্ষণই হলো জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। বিনিরাইল ও এর আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন সে সব জামাই এই মেলার মূল ক্রেতা।
জামাইরা চান সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যায়। আবার মেয়ে-জামাইকে আপ্যায়ন করতে শ্বশুরেরাও মেলা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে যান বাড়িতে।
গতকাল সকালে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে ব্যবসায়ীরা মেলায় এসেছেন। নানা বয়সী হাজার হাজার ক্রেতার ঢল নামে মেলায়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মাছ উপরের দিকে তুলে ধরছেন বিক্রেতারা।
স্থানীয়রা জানান, শুধু এ উপজেলার লোকই নয়, আনন্দের এ মেলা উপভোগ করতে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকেও ছুটে এসেছেন। এবারের মেলায় প্রায় চার শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছেন।
মাছের মধ্যে ছিল সামুদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালিবাউশ, পাবদা, গুলশা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইক্কা, রূপচাঁদাসহ নানা জাতের মাছ। মাছ ছাড়াও মেলায় আসবাব, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির দোকানও ছিল প্রচুর।
মেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আলী হোসেন জানান, প্রায় ২৫০ বছর ধরে এ মেলার আয়োজন হয়। শুরুতে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে হতো। প্রথমে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই মেলার আয়োজন করতেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলাটি এখন সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যাই হোক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচার বহন করছে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক অপূর্ব কুমার বাইন বলেন, সুন্দর পরিবেশে মেলা চলছে। এটা পুরানো মেলা। এই মেলায় প্রচুর লোকের সমাগম হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত রয়েছে।