বিনোদনরংপুর

প্রেম ও ত্যাগের গল্পে এক অনবদ্য থ্রিলার ‘এনিথিং ফর হার’

প্রেম, ত্যাগ, এবং থ্রিলারের মিশেলে এক অনবদ্য ফ্রেঞ্চ সিনেমা ফ্রেঞ্চ সিনেমা ‘এনিথিং ফর হার’ (Pour elle) মুক্তি পায় ২০০৮ সালে। এটি প্রেম, ত্যাগ এবং অসাধারণ সাসপেন্সে ভরপুর একটি থ্রিলার। ফ্রেড কাভায়ে পরিচালিত এই সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শক এবং সমালোচকদের কাছে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ১৬ বছর পরও সিনেমাটি দর্শক হৃদয়ে ছাপ ফেলে দেবে।

তাই থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য আজকের এই রিভিউ। 

রোমান্সের মোড়কে রোমাঞ্চকর থ্রিলার ‘এনিথিং ফর হার’ আপনাকে প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখবে। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে লিসা (ডায়ান ক্রুগার) এবং জুলিয়েন (ভিনসেন্ট লিনডন); এক সুখী দম্পতি। তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তারা একটি সুন্দর জীবনযাপন করছিল।

লিসা চাকরি করেন আর জুলিয়েন একজন স্কুল শিক্ষক। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু হঠাৎই তাদের জীবনে ঘটে যায় এক অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা। লিসাকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জুলিয়েন নিশ্চিত যে তার স্ত্রী নির্দোষ এবং লিসাকে মুক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার, তিনি তার সবই করেন।
তবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে জুলিয়েন বেছে নেয় অন্য এক পথ। সে লিসাকে কারাগার থেকে পালাতে সাহায্য করার পরিকল্পনা শুরু করে। কিন্তু তার এই চেষ্টার প্রতিটি ধাপে রয়েছে ভয়ংকর বিপদ এবং টানটান উত্তেজনা। 

ভিনসেন্ট লিনডন অসাধারণ অভিনয় করেছেন জুলিয়েনের চরিত্রে। স্ত্রীকে মুক্ত করার জন্য তার আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং সাহসিকতা দর্শককে মুগ্ধ করবে।

ডায়ান ক্রুগার লিসার চরিত্রে একদম পারফেক্ট। তিনি তার চরিত্রের প্রতিটি আবেগ গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ফ্রেড কাভায়ে, যিনি এই সিনেমার পরিচালক, তার পরিচালনায় সিনেমাটির প্রতিটি মুহূর্ত রোমাঞ্চকর। সিনেমার গল্পে কোনো বাড়তি বা অহেতুক দৃশ্য নেই। প্রতিটি দৃশ্যই গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায়, যা এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে। সিনেমাটোগ্রাফি দারুণ। ক্যামেরার কাজ এবং কালার গ্রেডিং গল্পের টোনের সঙ্গে একদম মানানসই। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক প্রতিটি মুহূর্তের সাসপেন্স বাড়িয়ে তুলেছে। সম্পাদনা ছিল শার্প এবং টাইট। পুরো সিনেমাজুড়ে টানটান উত্তেজনা ধরে রাখার জন্য এগুলোর সমন্বয় অসাধারণ ছিল।

সিনেমাটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে এর রিমেক তৈরি হয়েছে হলিউড এবং বলিউডে। হলিউডে এটি ‘দ্য নেক্সট থ্রি ডেইজ’ নামে রিমেক হয় ২০১০ সালে, যেখানে রাসেল ক্রো অভিনয় করেন। আর বলিউডে ২০২৪ সালে ‘সাভি’ নামে রিমেক হয়, যা টি-সিরিজ প্রযোজনা করে। তবে অরিজিনাল ফ্রেঞ্চ সিনেমাটিই সবার কাছে বেশি প্রশংসিত। যারা ইংরেজি সাবটাইটেল বুঝতে পারেন, তাদের জন্য অরিজিনালটি দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রিমেক সংস্করণগুলোতে মূল গল্পের গভীরতা এবং আবেগ কিছুটা হলেও কমে গেছে।

কেন দেখবেন এই সিনেমা? যদি আপনি রোমান্টিক থ্রিলার পছন্দ করেন, তবে এটি আপনার জন্য। সিনেমাটি প্রেমের শক্তি এবং ত্যাগকে অসাধারণভাবে তুলে ধরেছে। গল্পের প্রতিটি বাঁকে সাসপেন্স এবং টানটান উত্তেজনা রয়েছে। এটি একটি মাস্টারপিস, যা ভালোবাসার জন্য একজন মানুষ কতদূর যেতে পারে, তা সুন্দরভাবে দেখিয়েছে। সিনেমাটি প্রেম, আবেগ, এবং নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে দেয়। জুলিয়েনের সংগ্রাম শুধুমাত্র তার স্ত্রীর জন্য নয়, বরং নিজের বিশ্বাস এবং ভালোবাসার মূল্য বোঝানোর জন্য। ফ্রেঞ্চ থ্রিলারের অনুরাগীদের জন্য ‘এনিথিং ফর হার’ অবশ্যই দেখা উচিত। এটি আপনাকে গল্পে ডুবিয়ে রাখবে এবং বারবার ভাবাবে ভালোবাসার প্রকৃত শক্তি সম্পর্কে। যারা এখনো দেখেননি, তাদের জন্য আমার পরামর্শ—অরিজিনাল ফ্রেঞ্চ সিনেমাটিই দেখুন। এটাই আপনাকে সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা দেবে।

 

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker