বিনোদন

অপমৃত্যুই যেন এটিএম পরিবারের নিয়তি

দেশবরেণ্য অভিনেতা তিনি। পর্দায় তার উপস্থিতি কোটি দর্শককে বিনোদন দিয়েছে। কখনো খলনায়ক, কখনো বাবার মমতা, কখনো কৌতুকাভিনেতা- এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন একাধারে একজন গুণী অভিনেতা ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তবে পর্দার জীবনে সফল সেই মানুষটিরই কিনা পারিবারিক জীবন বেদনার, কষ্টের, অপ্রাপ্তির! অশান্তি, খুনোখুনি, অপমৃত্যুই যার পরিবারের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনী জামান। এই দম্পতির ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে। যার মধ্যে দুই ছেলের করুণ মৃত্যু হয়েছে। ২০১২ সালে খুন হন বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীর।

আর আজ লাশ মিলেছে তার ছোট ছেলে কুশলের।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের (৪৬) মরদেহ। বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নাসিরহাট এলাকায় জয়ন্তী নদী থেকে উদ্ধার করা হয় প্রয়াত এই অভিনেতার ছেলের লাশ। পুলিশ জানায়, মরদেহের সঙ্গে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।

আর আজ লাশ মিলেছে তার ছোট ছেলে কুশলের।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের (৪৬) মরদেহ। বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নাসিরহাট এলাকায় জয়ন্তী নদী থেকে উদ্ধার করা হয় প্রয়াত এই অভিনেতার ছেলের লাশ। পুলিশ জানায়, মরদেহের সঙ্গে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে।

সেটি প্রয়াত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ছেলে এটিএম খালেকুজ্জামান কুশলের (৪৬)। সেখানে ঢাকার সুত্রাপুর থানার দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনের ৪৬ নং বাসার ঠিকানা দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালে এই ছেলের হাতেই খুন হন এটিএমন শামসুজ্জামানের বড় ছেলে। সেই মামলা দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এটিএম শামসুজ্জামানের বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীর ২০১২ সালের ১৩ মার্চ বিকেলে রাজধানীর সূত্রাপুর থানার দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনের ৪৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের নিজ বাড়িতে ছোট ভাই কুশলের ছুরিকাঘাতে খুন হন। এ ঘটনায় এটিএম শামসুজ্জামান ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আরেক ছেলের বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই পুলিশ কুশলকে গ্রেফতার করে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৩ মার্চ দুপুর আড়াইটার দিকে শামসুজ্জামান শুয়েছিলেন। এ সময় গেটে দু’টি বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখেন, তার বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীর এক তালা-চাবিঅলাকে দিয়ে বাড়িতে ঢোকার বিকল্প দরজার তালা ভাঙছেন। ছেলেকে তালা ভাঙার কথা জিজ্ঞাসা করলে কবীর তার বাবাকে কটূক্তি করেন। ছেলের বেয়াদবি সহ্য করতে না পেরে তাকে একটি থাপ্পড় মারেন এটিএম শামসুজ্জামান।
কবীর তৎক্ষণাত তার বাবাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি লাথি মারতে থাকে। ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতরে ফেলে দেন। ঘরের দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এটিএম শামসুজ্জামানের মাথা ফেটে যায়। এ সময় ছোট ছেলে খলিকুজ্জামান কুশল তার ঘর থেকে বের হয়ে এসে বড় ভাইকে উর্পযুপরি ছুরিকাঘাত করেন। চিৎকার শুনে এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ভাই ইব্রাহিম জামান এসে কুশলকে জোর করে সরিয়ে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দেন। কবীরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠান। সেখানেই মারা যান কবীর।

মামলায় নিহত কবীরকে বদরাগী এবং তার পিতা-মাতাকে মাঝে মাঝেই মারধর করতেন বলে উল্লেখ করা হয়। কামরুজ্জামান কবীরের হত্যা মামলার রায়ে তার ছোট ছেলে এটিএম খলিকুজ্জামান কুশলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে আদালত। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় তাকে। এবার সেই ‍কুশলের লাশ মিলল নদীতে। জামিনে বের হয়ে পলাতক ছিলেন তিনি।

স্বনামধন্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। ছোটপর্দা কিংবা বড়পর্দা সকল ক্ষেত্রেই তুমুল জনপ্রিয়, নন্দিত ও সফল অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেতা জীবনের শেষ বয়সেও অভিনয়ের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। তবে পারিবারিক জীবনে অশান্তি যেন ছিল তার নিত্যসঙ্গী। মৃত্যুর আগে নিজের ছেলের হত্যা দেখে ব্যথিত হৃদয় নিয়েই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে বরেণ্য এই অভিনেতাকে। এবার ছোট ছেলেরও হলো অপমৃত্যু। কোটি মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসা জাগানো মানুষটির বাড়ির উঠানে একের পর এক বিষাদের ছায়া। অপমৃত্যুই যেন এটিএম পরিবারের নিয়তি!

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker