একসময় ঈদ মৌসুমে ডজনখানেক নাটক-টেলিফিল্মে পাওয়া যেত আফরান নিশোকে। তবে গত ঈদের মতো এবারের ঈদেও তাঁকে পাওয়া যাবে হাতে গোনা তিন-চারটি নাটকে। কারণ ওয়েব কনটেন্টে মনোযোগ দিয়েছেন অভিনেতা। লিখেছেন রাকিব হাসান।
গত বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মাত্র দুটি একক নাটকে অভিনয় করেছেন সময়ের জনপ্রিয়তম এই অভিনেতা। একটি কাজল আরেফিন অমির ‘দ্য কিডন্যাপার’, অন্যটি মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘লাফ’। এর মধ্যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রচারিত হয়েছে ‘লাফ’। ঈদের আগে আরেকটি, বড়জোর দুটি নাটকে অভিনয়ের প্ল্যান রয়েছে নিশোর।
তবে আগে শুটিং করা কিছু নাটক প্রচার হতে পারে। দু্ই বছর ধরে এভাবেই কাজ করছেন নিশো। কারণটা কী?
নিশো বলেন, “গত বছর ঈদের আগেও তো করোনা থেকে আমরা সেভাবে পরিত্রাণ পাইনি, অনেক কিছু বিবেচনায় তখন তাই কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। আগে শুটিং করা কিছু নাটক প্রচারিত হয়েছে। করোনার প্রকোপ কমে আসার পর ব্যাক টু ব্যাক তিনটি ওয়েব সিরিজ করলাম—চরকির ‘রেডরাম’, ‘সিন্ডিকেট’ ও হইচইয়ের ‘কাইজার’। এগুলো করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় দিতে হয়েছে। ”
সেটা কেমন? ‘প্রতিটা সিরিজের শুটিং শুরুর আগে নির্মাতা ও পুরো টিমের সঙ্গে কয়েক দফায় বসেছি। গল্প ও চরিত্র নিয়ে গবেষণা, চরিত্র রূপায়ণের জন্য সময় লাগে। তা ছাড়া সিরিজের জন্য নিজের একটা লুক তৈরি করে সেটা নাটকে এক্সপোজ করতে চাইনি। ওয়েব সিরিজে কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, এখানে একটু বেশি সময় দেওয়া উচিত। নইলে পুরো প্রজেক্ট এবং নিজের অভিনীত চরিত্রের প্রতি অবিচার হবে। ’
নাটকের সংখ্যাটা সচেতনভাবেই কমিয়েছেন। অভিনেতা বলেন, ‘নাটকে তো আমরা তিন দিনে শুটিং শেষ করে ফেলি। এখানে কোনো রিহার্সাল নেই, এমনকি টিমের সঙ্গে দুই ঘণ্টা বসার সুযোগও পাই না। নাটকের সেটে গিয়েই যত শলা-পরামর্শ। ওয়েবে নির্মাতারা শিল্পীদের নিয়ে যত্ন করে কাজটা করতে চান। ওখানে তাই একটু সময় বেশি দিচ্ছি বা বলা যায় দিতে চাচ্ছি। ’
গেল কয়েক বছরে ঈদের নাটকের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেতা নিশো। নাটকের সংখ্যাটা এভাবে কমিয়ে নেওয়ায় নিশোর কাছের অনেক নির্মাতা কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। সেটা জানেন নিশোও। বলেন, ‘ওয়েবের কাজগুলো একটার পর একটা হাতে নিয়েছি। এ জন্য প্রেসারটা বেশি। একটা সিরিজের শুটিংয়েই ২০-২৫ দিনের মতো লাগে। তারপর ওই চরিত্র থেকে বের হতেও সময় লাগে। মিনিমাম ১০ দিনের একটা বিরতি নিতেই হয়। আবার এর মধ্যে আগে চুক্তিবদ্ধ হওয়া কিছু এনডোরসমেন্টের কাজও করতে হয়। এসবের মাঝেও নাটক যে একেবারেই করতে চাই না তা নয়। ভালোবাসা দিবসের তিনটি নাটক করার ইচ্ছে ছিল। বৃষ্টি ও আনুষঙ্গিক কিছু কারণে মিজানুর রহমান আরিয়ানের নাটকটা করতেই ছয় দিন লেগে গেল। এরপর অন্য নাটকগুলো আর করা হয়ে ওঠেনি। ’
নিশো মনে করেন, শিল্পীদের প্রতিটা পদে পদে একটা রেসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় সিস্টেম, ইন্ডাস্ট্রি নাকি এমনই। টিভি ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অনেক কথাই বললেন নিশো, তার সারমর্ম দাঁড়াল এমন, ‘এখানে সবাই যে যার মতো কাজ করার চেষ্টা করে। কেউ না কেউ আমাদের একটা প্রেসারে ফেলে দেয়, কে কার চেয়ে এগিয়ে? বা কার হাতে কত বেশি কাজ? কোয়ালিটির চেয়ে সংখ্যা তখন বড় হয়ে ওঠে। যাঁরা নাটক বানাচ্ছেন বা চ্যানেল থেকেও একটা চাপ আসে, ওমুক শিল্পীকেই লাগবে। অনেক সময় চরিত্র গোছানোর জন্য যে সময়টা দরকার সেটা আমরা পাই না। আমরা চলে যাই রেসের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় করেই যাচ্ছি। আমরা কী করছি, একটা কাজের প্রস্তুতির সময়টা দিনকে দিন কমাচ্ছি। যখন দেড় লাখ টাকা বাজেটের নাটক হতো, সেই সময় তো কাজ ছেড়ে দিইনি। সেই নাটকের বাজেট এখন দশ লাখের ওপরে। এটাও কিন্তু আমরা তৈরি করতে পেরেছি। এটা ব্যবসাভিত্তিক শিল্প। যখন প্রডিউসার ব্যবসা পাচ্ছেন, তখন তিনি আরো অর্থ লগ্নি করছেন। এভাবেই বাজেট বেড়েছে। আমরা বাজেট থেকে শুরু করে কলাকুশলীদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। তাহলেই হয়তো অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার সাহস করবেন অনেকে। প্যাশনের পাশাপাশি আমাদের প্রফেশনালি ভাবতে হবে। এখন টিভির পাশাপাশি ইউটিউব বা অন্য প্লাটফরমে দর্শক নাটক দেখছে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাংলা ভাষাভাষী থাকুক না কেন, তাঁরা নাটক দেখছেন। এখানেই আমাদের সার্থকতা। শুরুতে একটা প্রেসারের কথা বলেছি, তার মানে এটা নয়, নাটক আর করতে চাই না। আসলে আমি চাইলেও করতে পারছি না। ’
হইচইয়ের ‘কাইজার’-এর শুটিং শেষ করেছেন। সামনে চলচ্চিত্রেও দেখা যেতে পারে তাঁকে। ঈদের পর আরো চমক নিয়ে হাজির হবেন নিশো। নাটকও করবেন, তবে সংখ্যাটা ক্রমেই কমতে থাকবে।
নিশো বলেন, “কোনো চরিত্রের প্রতি অবিচার করতে চাই না। ধরুন একটা চরিত্র এলো, যেখানে আমি আর্মি। কিন্তু আমাকে আর্মির মতো ফিট লাগছে না। পেয়েছি বলেই কাজটা করে ফেলব? এত দিন অভিনয় করে এমনভাবে কোনো চরিত্র নষ্ট করলে সেটা তো নিজের কাছেই খারাপ লাগবে। ‘রেডরাম’-এ সিআইডি অফিসার ছিলাম। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সিনিয়র একজন অফিসার প্রশংসা করে আমাকে বলেছেন, ‘আমরা আসলে এমনই। আমরা ধুম করে কোনো কাজ করি না। আমরা সময় নিয়ে যতটা সম্ভব অবজারভ করার চেষ্টা করি। ’ জানি না কতটা চরিত্রটার মতো হতে পেরেছি। তবে যখন এমন প্রশংসা পাই তখন অনেক কিছু ছেড়ে পথটা ভিন্ন করতেই হয়। ”