‘প্রতিবেশি দেশ ভারতের অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী আমার বন্ধু। বেশ ভালো বন্ধু। এখনো দাপিয়ে ছবি করে বেড়াচ্ছে আর আমাদের আলমগীর ভাইকে শিল্পী সমিতির বিচার সালিশ করে বেড়াতে হয়। বলিউডের হেমা মালিনী, রেখা,মাধুরিরা ছবির শুটিং করে বেড়ায় আর আমি, রেজিনা, অঞ্জনা,সুচরিতারা বসে বসে ফেইসবুক চালাই।’ এক প্রকার আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন সত্তর-আশির দশকের জনপ্রিয় নায়িকা নূতন।
এক সময়ের জনপ্রিয় এই অভিনত্রী চলচ্চিত্রের বর্তমান দুর্দশার পেছনের কারণ হিসেবে ইন্ডাষ্ট্রির মানুষের অজ্ঞতাকেই দায়ি করলেন। একই সঙ্গে জানালেন নির্বাচন আর নেতা হওয়ার দিকে মনোযোগই এই ইন্ডাষ্ট্রিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
নূতন বলেন, ‘ভারত একের পর এক চলচ্চিত্র বানায়। বর্তমান চলচ্চিত্র দিয়ে আগের চলচ্চিত্রের ব্যবসার রেকর্ড ভাংগে। আর আমরা একের পর এক সংবাদ সম্মেলন করে সমিতি ভাংগি। আমাদের চলচ্চিত্রের ধ্বংসের মূল কারন সিনিয়দের অসম্মান করা ও নিজেদের অজ্ঞতা।’
সত্তর-আশির দশকের এই অভিনেত্রীর সঙ্গে দারুণ সখ্যতা ওপার বাংলার দেবশ্রী ও প্রসেনজিতদের। অথচ নূতন যখন পুরোপুরি সিনেমায় ব্যস্ত ছিলেন সে সময় তারা এপার বাংলায় এলে তাদের সিনেমার শুটিংয়ের সেট দেখে চমকে যেতেন বলে জানালেন। তারা আক্ষেপ করতেন এমন সাঁজানো সেটে কবে শুটিং করতে পারবেন!
নূতনের ভাষ্য, ‘ওপার বাংলার দেবশ্রী, প্রসেনজিতরা আমার বাসায় এসে না খেলে ওদের মন ভরত না। আমাদের সেট দেখে হতভম্ব হতো। বলতো, মাগো দিদি একি সেট গো! আর আজ আমরা বসে বসে তাদের ছবি দেখি আর ঘরে থাকি। আমরা ইলেকশন, শুধু ছবি নির্মাণের ঘোষণা আর নতুন নতুন নায়িকা বানানোর নাম করে মহরত নিয়ে ব্যাস্ত। আর ওরা দৌরাচ্ছে পরিচালক, নায়ক নায়িকাদের বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে তামিল,তেলেগু,মালায়াম আর কলকাতা শিল্পীদের সম্মান দিয়ে মাথায় তুলে আর আমরা চেয়ার মাথায় নিয়ে একের পর এক ইলেকশনের ঘোষনা দেই।’
ঢাকাই চলচ্চিত্রের বর্তমান ধ্বংস্তুপ দেখে আক্ষেপের শেষ নেই নূতনের। এফডিসিতে বর্তমান চিত্র দেখে তার বুক হু হু করে উঠে। কোথায় আগে এ ফ্লোরে ও ফ্লোরে শুটিংয়ে মুখর থাকতো সেখানে আর কি চর্চা হচ্ছে? এই প্রশ্ন নিজেই নিজেকে করেন নূতন। কোনা উত্তর পান না। চোঝ ঝাপসা হয়ে উঠে তার।
নূতন বলেন, আমাদের স্বপ্নের এই ইন্ডাষ্ট্রির এতো দ্রুত ধ্বংস দেখতে হবে ভাবিনি। ২০০০ সালে একদল রাজাকার এই চলচ্চিত্র ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। কিছুটা সফলও হয় তারা। যারা এখন প্রয়াত। ২০১৬ সালের পর এসে একদল নব্য রাজাকার আবারও এই ইন্ডাষ্ট্রি ধ্বংস কতে মরিয়া। শিল্প আর শিল্পীদের ও সত্যিকার সিনেমা প্রেমীদের পেটে যারা নিজেদের স্বার্থে লাথি দিলো তাদের বিচার অতি নিকটে হবে।
নূতন বলেন, আমরা দুস্থ শিল্পী হয়ে কাজের ক্ষুধায় এ দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে ঘুরছি। আর একদল শুধু চেয়ারের লোভে এ রুম থেকে ওই রুমে। আমি সাউথ এর মেয়ে। আমার ভারতের ফিল্ম করার কথা ছিলো। কিন্তু আমি এ দেশেই ক্যারিয়ার গড়ি। অথচ আজ চলচ্চিত্রের অবস্থা দেখলে কান্না আসে। তবে আজ বেঁচে থাকলে এমনটি হতো না। আমরা ১৮০০ থেকে ২০০০ হলে ছবি চলা নায়ক নায়িকা অথচ আজ আমাদের সবার নির্মমতা যে কাজ নেই, হল নেই, আমাদের নিয়ে ভিন্ন চরিত্রায়ণ হয় না।
সবশেষ নূতন বলেন, ‘আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চন, ওমর সানি, অমিত হাসান, আরও যারা গুণি অভিনেত্রী অভিনেতা আছেন, তারা আজ শুধু পোস্টারে থাকার জন্য ৩/৪ সিনের অভিনেতা অভিনেত্রী তকমা নিয়ে বসে আছেন। বিষয়টি আমাদের সবার জন্যই আক্ষেপের কারণ।’