বিনোদন

যেভাবে নির্যাতন করতো ফিরোজা, ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন চিত্রনায়ক অভি

চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভিকে গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন অভিকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করতেন। ওই মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে এই ঢাকাই ছবির নায়ককে উদ্ধারের পর জানা যায় আরো ভয়াবহ কাহিনি। অভি জানান, ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণদের অ্যাবিউজ করতেন।

মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে মূলত চিকিৎসার নামে রোগী আটকে রেখে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করাই ছিল প্রতিষ্ঠান মালিকের মুখ্য উদ্দেশ্য। র‌্যাবের অভিযানে আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অভিযানে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিকসহ ৫ আটকের বিরুদ্ধে বুধবার বিকেলে সদর মেট্রো থানায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে মামলা করার পর আসামিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বুধবার দুপুর ১টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

চিত্রনায়ক অভি এই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আসা ও ভর্তির বিষয়ে র‌্যাব জানান, দেশে করোনাকালীন সময়ে চলচ্চিত্রের কার্যক্রম স্থবির থাকায় অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে তিনি কিছুটা মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি নিয়মিত ঘুমের ওষুধ সেবন শুরু করলে তার আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। যার কারণে তাঁকে ওই মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। 

২০২১ সালের মার্চ মাসে তার মা চিকিৎসার জন্য তাকে ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসেন এবং মালিক বাধঁনের কথামতো তার মা তাকে সেখানে ভর্তি করান। পরে তার মা ছেলের চিকিৎসা বাবদ ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা চিকিৎসা খরচ বাবদ প্রদান করেন। মূলত চিকিৎসার নামে তাকে আটকে রেখে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করাই ছিল ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের মুখ্য উদ্দেশ্য।

সংবাদ সম্মেলন শেষে অভি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় যে যেভাবে ওই মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে বের হন, তার বর্ণনা দিয়েছেন। অভি বলেন, আমি জানি ওরা এভাবে আমাকে শেষ করে ফেলবে। যাদের টাকা আছে তাদের চিকিৎসার নামে আটকে রেখে চাঁদা আদায় করতে থাকে। যারা গরিব তাদের বেশিদিন রাখা হয় না। কারণ তাদের রেখে লাভ নেই। আমি এমন একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করি যে সুস্থ হয়ে বাইরে গিয়ে ফের ফিরে আসে। এসময় সে ফোন নিয়ে আসে, তাকে আমি বলি আমার প্রাণ ভিক্ষা দাও। আমাকে হেল্প করো, নাহলে এখানে আমি মারা যাব। সে আসার পর তার ফোনটা আমি হাতে পাই।

এই চিত্রনায়ক বলেন, ‘একদিন ভোর ৫ টার দিকে আমি কিচেনে মোবাইল নিয়ে গিয়ে আমার বন্ধু অভিনেতা জয় চৌধুরীকে ফোন দেই। তাঁকে আমি বলি আমার প্রাণ বাঁচাতে। সে বুঝতে পারে। জায়েদ খানের সঙ্গে কথা বলে। এরপর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি র‍্যাবে অভিযোগ জানায়। এরই প্রেক্ষিতে ওখান থেকে আমাকে উদ্ধার করে।’

সেখানের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছিলেন অভি। বলেন, আমাদের ক্ষুধার্ত রাখা হতো। যখন গরম ভাত হতো। চুপ করে গরম ভাত হাত দিয়ে ধরে জাস্ট গিল এ ফেলতাম, যেন কেউ না দেখতে পায়। মনে হতো গলা দিয়ে আগুন নামছে। কতটা ক্ষুধার্ত থাকলে মানুষ এমনটা করে? 

অভি বলেন, ‘খাওয়ার কষ্ট দেওয়া হতো। ২০ জনের জন্য ৭-৮ ছোট কৌটায় ভরে চাল নিয়ে রান্না করা হতো। একবেলা খাবার দিতো না। যে সামান্য খাবার দেওয়া হতো তাতে কারো পেট ভরতো না। ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকতো সকলে। এতোটাই ক্ষুধার্ত রাখা হতো যে কল্পনা করা সম্ভব না। একেকজন রান্না ঘরে কলার খোসা, লেবুর খোসা চিবিয়ে খেতো। ময়লার ঝুড়িতে ফেলা মুরগির হাড়, ভাতের মাড়। ভাতের মাড় যেখানে ফেলে দেওয়া হতো সেখান থেকে তুলে খেতো।’

এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এখানে চিকিৎসার নামে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হতো বলে অভি জানান। এছাড়া ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণদের অ্যাবিউজ করতেন মালিক বাঁধন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গ্রেপ্তার ফিরোজা নাজনীন ওরফে বাঁধন তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর শিপনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহে বসেন। শিপন তার সঙ্গে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে বসবাস করত। কিন্তু তাদের বিবাহের কোনো বৈধ নথিপত্র দেখাতে পারেনি বাঁধন।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বছিলা র্যাব-২ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিস্তারিত জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ১ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির’ পক্ষ থেকে র‍্যাব-২ এর কাছে অভিযোগ করা হয়, একজন চিত্রনায়ক দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রমে অনুপস্থিত রয়েছেন। পরে তারা জানতে পারেন, চিত্রনায়ককে গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুনর্বাসন কেন্দ্রটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। পরে অভিযোগের সত্যতা পায় তারা এবং মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটির ব্যাপক অনিয়মের সম্পর্কে জানতে পারে। এর ধারাবাহিকতায় পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে অভিযান পরিচালনা করে চিত্রনায়কসহ ২৮ জনকে উদ্ধার করা হয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker