টাঙ্গাইলে ‘তাণ্ডব’ বন্ধ: মবের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের আহ্বান
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ‘তাণ্ডব’ সিনেমা বন্ধ হওয়ায় ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ’ মব হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিনেমার বিকল্প প্রদর্শনী স্থানীয় কিছু মানুষের বাধায় বন্ধ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (১০ জুন) এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ’ নামের একটি সংগঠন। তারা মব হস্তক্ষেপের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জোরালো আহ্বান জানিয়েছে এবং এটিকে দেশের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
সিনেমা হল না থাকায় এবারের ঈদুল আজহায় টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ দেখার বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছিল। স্থানীয় একটি অডিটোরিয়ামে সিনেমাটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার হেড অব মার্কেটিং কামরুজ্জামান সাইফুল। ঈদের দিন থেকে ছবিটি হাউজফুল চললেও, স্থানীয় কিছু মানুষের বাধার মুখে অবশেষে সিনেমাটির প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার (১০ জুন, ২০২৫) সিনেমাটির শো বন্ধের এই সিদ্ধান্ত নেন আয়োজকরা।
বুধবার (১১ জুন, ২০২৫) গণমাধ্যমে পাঠানো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে, সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সনদপ্রাপ্ত একটি চলচ্চিত্র ‘তাণ্ডব’-এর প্রদর্শনীতে স্থানীয় কিছু গোষ্ঠীর উসকানি এবং মব সৃষ্টির মাধ্যমে জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে আমরা শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখছি না, বরং এটি বাংলাদেশের সহজিয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সহাবস্থানের চর্চা এবং শিল্প-সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।”
সংগঠনটি আরও যোগ করে, “বাংলাদেশ বহু ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির দেশ। এই ভূখণ্ডের সহনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমাদের সিনেমা, সংগীত, যাত্রাপালা, নাটক ও সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়। কারও কাছে কোনো সিনেমা অপছন্দ হতে পারে, কিন্তু সেটি দেখা বা না-দেখা একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে, সংঘবদ্ধ মবের মাধ্যমে প্রদর্শনী বন্ধ করার চেষ্টা, সিনেমা হলের কর্মীদের হুমকি দেওয়া এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি স্পষ্টতই সংবিধান ও আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড।”
বিবৃতিতে রাষ্ট্রের কাছে সিনেমা হল মালিক, কর্মী ও দর্শকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “অতএব, আমরা জোরালোভাবে বলছি, সেন্সর বোর্ডের অনুমোদিত চলচ্চিত্রের মুক্তপ্রদর্শন সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার মৌলিক অংশ। সিনেমা হলের মালিক, কর্মী ও দর্শকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এই প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোরালো অনুরোধ জানাচ্ছি।”
এ ধরনের ঘটনায় আইনি প্রেক্ষাপটের বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ বিবৃতিতে বলেছে, “বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ মনে করে, এ ধরনের ঘটনা শুধু নৈতিক বা সাংস্কৃতিক অধিকার লঙ্ঘন নয়, একই সাথে সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়েও পড়ে। প্রয়োজন মাফিক এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানো এবং উচ্চ আদালতে রুল জারির মাধ্যমে সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভবিষ্যতে প্রশাসনিক নীরবতা কিংবা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর চাপে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার আমরা সংরক্ষণ করি।”
সবশেষে টাঙ্গাইলের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে সংগঠনটি বলে, “বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। একই সঙ্গে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি ‘তাণ্ডব’ চলচ্চিত্রটির পুনরায় প্রদর্শনের সুযোগ নিশ্চিত করা হোক, যা গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পক্ষে স্পষ্ট বার্তা হয়ে থাকবে।”