ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক প্রদান

ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জে উপজেলায়  বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য সচেতনা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

১৪ নভেম্বর সোমবার সকালে ১০ টায় পীরগঞ্জ  ডায়াবেটিস হাসপাতাল হলরুমে  অনুষ্ঠিত হয়। এই উদ্বোধনী ও সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, পীরগঞ্জ ডায়াবেটিস সমিতি ঠাকুরগাঁও।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির, উপাধ্যক্ষ ফয়জুল ইসলাম, সা: সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা পীরগঞ্জ  ডায়াবেটিস সমিতি, পীরগঞ্জ পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল, সমাজসেবা অফিসার রফিকুল ইসলাম। 

ডায়বেটিস জনিত কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশ্বে ৫ কোটি মানুষ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। প্রতি ৮ সেকেন্ডে একজন মানুষ মারা যাচ্ছে। ডায়বেটিস প্রতিরোধে সুষম খাবার গ্রহণ, স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন, শারীরিক পরিশ্রম ও শরীর চর্চার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন অনুষ্ঠানের বক্তারা।

এ সময় বিশ্ব ডায়াবেটিসক দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে, অতিথিদের মাঝে  সম্মাননা স্মারক  প্রধান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির, জাতীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, জুয়েল, প্রধান শিক্ষক বিজয় রায়, ফরিদা ইয়াছমিন, কৃষ্ণমোহন রায়, আনন্দ চন্দ্র রায়,  আদর্শ ডায়াবেটিসক রোগী, সুলতান আহমেদ, করিমা বেগম, দবিরুল ইসলাম, মরহুম আব্দুল আজিজ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে এই সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

পরে অতিথিরা ডায়াবেটিসক নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য রাখেন। যেকোন ব্যক্তিই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে (গ্লুকোজ) ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই ডায়াবেটিস হয়। এই জটিলতার কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে।

ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনী এবং অনেক সময় শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটেও ফেলতে হতে পারে। লাইফ স্টাইলের কারণে আমাদের জীবনে অন্য জটিলতার পাশাপাশি ব্যাপকহারে ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে। একে আয়ত্বে রাখার জন্য প্রথমেই ভাবতে হবে খাবারের কথা। কারণ পথ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক রাখার উদ্দেশ্য হলো-দেহের স্বাভাবিক বিপাক ক্রিয়া বজায় রাখা দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখা। ডায়াবেটিসের জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করা কর্মক্ষম থাকা, প্রজনন ক্ষমতা ঠিক রাখা, সামাজিক জীবন বাধাগ্রস্থ না হওয়া ইত্যাদি।

নিয়ন্ত্রিত খাবারের মধ্যে প্রথমেই আসে মিষ্টি খাবার। যেমন- চিনি, গুড়, মধু, গ্লুকোজ না খাওয়া। এছাড়া আমিষ বা প্রোটিন এবং চর্বি বা ফ্যাট স্বাভাবিক মাত্রায় গ্রহণ করা। সকালের নাস্তার সময় থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতি তিন থেকে সারে তিন ঘণ্টা পরপর খাবার খেতে হবে। ওষুধ ও খাবারের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকতে হবে। শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়া ধীরে ধীরে শোষিত হয় এমন শর্করা হলো জটিল বা পলিস্যাকারাইড। ভুসিযুক্ত আটার রুটি, লাল চাল, ভুট্টার খই, খেজুর আশযুক্ত শাকসবজি ও ফল হলো জটিল শর্করা। যদি কারও খাবারে শর্করা বাড়ানোর প্রয়োজন হয় তাহলে এ ধরনের শর্করা দিয়ে বাড়ানো যেতে পারে। এতে ডায়াবেটিস তেমন বাড়বে না। এদিকে দ্রুত শোষিত হয় এমন শর্করা হলো আঁশবিহীন মিষ্টি ফল, দুধ, আতপ চাল, ময়দা। এগুলো সঙ্গে বা ডাইসকারাইড। এ ধরনের শর্করা সব সময় সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। আবার প্রতিটি শর্করাযুক্ত খাবার সমানভাবে রক্তে শর্করা বাড়ায় না। খাবারের ঘনত্ব ও সময়ের ওপর রক্ত শর্করা বাড়তে পারে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের আমিষযুক্ত খাবারে কোনো বাধা নেই। বড়দের ক্ষেত্রে দৈনিক ১ থেকে ০.৮ গ্রাম আমিষ প্রয়োজন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য। উচ্চ আমিষ বা হাইপ্রোটিন প্রয়োজন শিশু, কম ওজন, অপুষ্টি, গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মাতা, পোড়া রোগীদের জন্য। আমিষ রক্ত শর্করাকে খুব ধীরে ধীরে বাড়ায়। পুরো ক্যালরির ১২-২০ শতাংশ আমিষ থেকে আসা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।এটা প্রমাণিত যে, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার হৃদরোগসহ অন্য অনেক রোগের উৎপত্তি ঘটায়। ডায়াবেটিসের সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে। যদি অন্ত্রে চর্বি বেশি জমা হয়, তাহলে শর্করা শোষণ কম হয়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।

চর্বি দুই রকম। সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত চর্বি। সম্পৃক্ত চর্বি হলো ঘি, মাখন, মাংসের চর্বি, ক্রিম, দুধের সর ইত্যাদি। অসম্পৃক্ত চর্বি হলো উদ্ভিজ তেল ও মাছের তেল। জলপাই ও বাদাম তেল মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এগুলো খুব সামান্যই রক্তের চর্বি বাড়ায়। সয়াবিন, শস্য ও সূর্যমুখীর তেল হলো পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এগুলো প্রাজমা কলস্টেরল কমায়। মাছের চর্বি হলো Docashexenoic acid বা DHA। একে উপকারী চর্বি বলে। আমেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে দৈনিক খাবারে ১০ শতাংশ-এর বেশি চর্বি না থাকাই ভালো। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ করোনারি হার্ট ডিজিজ। সেহেতু সম্পৃক্ত চর্বির ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।

খাদ্যের আঁশ দেরিতে হজম হয় বলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহায়ক। এ জন্য দৈনিক ২০-৩০ গ্রাম আঁশ খাবারে থাকা উচিত। আঁশযুক্ত খাবার হলো খোসাসহ ফল, বেসন, ডাল, পেকটিন (যা ফলের খোসায় থাকে), গুয়ার গাম (সিমের নির্যাস), ভুসিযুক্ত আটা, লাল চাল ইত্যাদি।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker