লালমনিরহাট

লালমনিরহাটে বড় রকমের বন্যার আশঙ্কা; দশ হাজার পরিবার পানিবন্দি

তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, সানিয়াজান ও স্বর্ণামতি নদীর পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটের প্রায় দশ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রান্না ও টয়লেটসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নদী পাড়ের হাজার হাজর মানুষ। বন্যার্তদের জন্য ১৫০ মে.টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

রোববার (১৯ জুন) দুপুর ১২টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার) মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমামিটার)। এর আগে শনিবার রাতে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। গত কয়েকদিন থেকে জেলার সব নদীর পানি হৃাস বৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে।

জানা যায়, ভারীবর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী জেলার পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী ও সদরের দশ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হাটু থেকে কোমর পানিতে বন্দি এসব লোকজন রান্না ও টয়লেট করতে পারছেননা। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় চলাচলসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে না পারায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। স্কুল কলেজ ডুবে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও পোষাপ্রাণী গরু, ছাগল, হাস মুরগী নিয়েও অসহায় অবস্থায় রয়েছেন তিস্তা পারের লোকজন।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বন্যার্তদের সহায্যের জন্য ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবারসহ নগদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে জিও ব্যাগ ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি ও জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর,গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

হাতিবান্ধা ফকির পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন জানান,গত দুইদিন ধরে প্রায় ১ শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পাওয়া হয়নি।

আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মহিষখোচা, দুর্গাপুর ইউনিয়নের পানিবন্দী লোকজনের তালিকা করে সাহায্য করা হচ্ছে। বন্যাদুর্গতদের সকল সহযোগীতা অব্যাহত আছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো: আবু জাফর বলেন, বন্যা কবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মে: টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার তা বিতরণ ও শেষ হয়েছে। বন্যা কবলিত যেসব এলাকা আছে সেগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, গতকালের চেয়ে আজ তিস্তা ও ধরলার পানি বেড়ে বিপৎসীমার লেবেল উঠা নামার মধ্যে রয়েছে। নদী ভাঙ্গণ রোধে বিভিন্ন যায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker