লালমনিরহাট

ফেসবুক লাইভে শিক্ষার্থী নির্যাতন; প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন সহপাঠীদের

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ফেসবুক লাইভে স্কুল শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান লিখনকে অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে সহপাঠী শিক্ষার্থীরা।

শনিবার(৪জুন) দুপুরে উপজেলার কেতকীবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন থেকে অতিদ্রুত দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। মিছিলড়ি স্থানীয় কেতকীবাড়ী বাজার প্রদক্ষিণ করে বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বাজারের সকল দোকানপাট ও সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এদিকে এ ঘটনায় গত শুক্রবার(৩ জুন) রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা রাকিব হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে উপজেলার কেতকীবাড়ী মাদ্রাসা মাঠে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার কেতকীবাড়ী এলাকার হাসানুর রহমান হিরুর ছেলে সিফাত(১৮), দুলু মিয়ার ছেলে জয়(২০) ও মাহবুব হোসেন।

আহত শিক্ষার্থী লিখন ওই এলাকার রাকিব হোসানের ছেলে এবং কেতকীবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর মানবিক শাখার শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার বিদ্যালয় চলাকালীন অভিযুক্তরা ক্লাস রুমে প্রবেশ করে কিছু শিক্ষার্থীকে মারধর করে। এ সময় প্রতিবাদ করলে তারা মেহেদি হাসান লিখনের উপর চড়াও হয়। এ নিয়ে ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে সকলের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আপোস মিমাংসা করা হয়। পরে এ ঘটনার জেড়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে ফোন করে মেহেদি হাসান লিখনকে ডেকে এনে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন সিফাত ও জয়। সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে সেই মারধরের লাইভ করেন তাদের সহযোগী মাহবুব। লিখনকে মারধর করে তারা চলে যায়। পরে খবর পেয়ে লিখনের পবিবার তাকে উদ্ধার হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

মানববন্ধনে লিখনের সহপাঠী মশিউর রহমান বলেন, ওই অভিযুক্তরা প্রথমে স্কুলে হামলা করে আমাদের বন্ধুদের মারধর করে। পরে লিখনকে ডেকে নিয়ে তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। তাই আমরা তাদের সঠিক বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে পরিক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করতেছি। তাদের গ্রেপ্তার করা হলে আমরা পরীক্ষায় বসবো না।

অপর এক শিক্ষার্থী নিলুফা বলেন, ওই বখাটেরা স্কুলে এসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। আর তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।

৭ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী নাঈম বলেন, ওরা আমাদের বড় ভাইকে মেরেছে। আমরা ওদের কঠিন শাস্তি চাই। যাতে তারা আর কখনো এমন কাজ করতে না পারে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, কেতকীবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিকী পরিক্ষা চলছে। তবে শিক্ষার্থী স্কুলে এসে পরিক্ষা বর্জন করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।

আমরা শিক্ষকরাও তাদের এই দাবিতে সমর্থন জানাই। আর ওই বখাটেরা যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা ন্যক্কারজনক। তাদের এমন শাস্তি দাবি করি যেন এরপর আর এমন ঘটনা ঘটাতে না পারে। এছাড়া তাদের যতক্ষন গ্রেপ্তার করা হবে না ততক্ষন আন্দোলন চলবে।

এ সময় খবর পেয়ে হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যান।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনের খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker