লালমনিরহাট

কত কষ্ট করি রাইতত থাকোং, মোর ঘরত আসি একবার দেখি যান বাহে

আইজ (আজ) মোর (আমার) ছাওয়াপোয়া (ছেলে-মেয়ে) থাকিও নাই। তিনটা বেটার (ছেলে) একটা বেটা তো বাঁচেই না। মুই (আমি) নিজে মরা, তাতে আর একটা বেটার ছাওয়াক (সন্তান) নিয়ে বড় মরা হছুং (মরে গেছি)। সবায় (সকলে) ঘর পায় খালি (শুধু) মোরে কপালোত সরকারের ঘর নাই বাহে (বাবা)। টাকা দিবার পাইলে মুইও পাকা ঘরত থাকির পানু হয়। কত কষ্ট করি রাইতত থাকোং ছোট ছাওয়াটাক নিয়া। তোমরা একবার মোর ঘরত আসি দেখি যান বাহে। এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন সত্তোর্ধ বৃদ্ধা রহিমা বেগম।

মুক্তিযুদ্ধে স্বামীকে হারিয়ে র্দীঘদিন ধরে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন বৃদ্ধা রহিমা বেগম (৭০)। সেই সন্তানরাই ব্দ্ধা মা রহিমার খবর এখন রাখেন না। তিস্তা নদীর বাঁধের উপর টিনের একটি ঝুপড়ি ঘরে সেই বৃদ্ধামা রহিমার বসবাস। সেই ঘরের উপরের টিনের দিকে তাকালেই টিনের ছিদ্র দিয়ে সুর্যের আলো দেখা যায়। জড়াজির্ন টিনের ঝুপড়ি আর ভাঙ্গা বিছানায় কাটছে তার জীবন।

সেই বৃদ্ধা রহিমা বেগমের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কশিরাম গ্রামের মুন্সির বাজার এলাকার তিস্তা নদীর বাঁধের উপর। রহিমা ওই এলার মৃত মতিয়ার রহমানের স্ত্রী।

কালীগঞ্জ উপজেলায় মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ৬২৫টি পরিবার জমিসহ ঘর পেলেও রহিমার ভাগ‌্যে জুটেনি সেই ঘর। ওই উপজেলায় ভুমিহীনদের জন‌্য জমিসহ ঘর বরাদ্দে সুবিধা ভোগীদের তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। এই উপজেলাতেই সমাজ কল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি’র বাড়ি। তার কাছে গিয়েও কোন লাভ হয়নি রহিমার।

স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধা রহিমা বেগমের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এক ছেলে ঢাকায় থাকেন, এক ছেলে এলাকায় চায়ের দোকানে কাজ করেন আর এক ছেলে দির্ঘদিন থেকে অসুস্থ। অসুস্থ ছেলের স্ত্রী চলে গেলেও রেখে গেছে একটি শিশু কন্যা। কোনো ছেলেই তাদের বৃদ্ধ মায়ের খবর নেয় না । ফলে রহিমা এই বৃদ্ধা বয়সে কখনো কখনো মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ, কখনো আবার কারো কাছে সাহায‌্য নিয়ে চলে জীবন জীবিকা। শিশু নাতনিকে নিয়ে ভাঙ্গা ঘরে কাটছে রাত। বৃষ্টি হলে জড়োসড়ো হয়ে নাতনীকে জড়িয়ে বসে থাকেন ঘরের এক কোনে। তবুও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চোখ পড়েনি বৃদ্ধা রহিমার উপর।

ওই এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেন জানান, ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে যা পায় তা দিয়েই কোন রকম বেঁচে আছে । যে যা দেয় তা দিয়েই তার জীবন চলে। তাকে যদি একটি সরকারী ঘরের ব‌্যবস্থা করে দেয়া যায় তাহলে ভালো হত।

তুষভান্ডার ইউপি চেয়ারম্যান নুর ইসলাম আহমেদ জানান, রহিমা বেগম অসহায়। ওই বৃদ্ধা সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে করি।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, রহিমা বেগমের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পর্যায়ক্রমে সকল ভুমিহীনদের তালিকা তৈরী করে পুণঃবাসন করা হচ্ছে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker