জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংখ্যালঘু অসহায় হিন্দু পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় প্রভাবশালীদের দাপটে বাড়ি ঘর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সংখ্যালঘু শ্রী স্বপন কুমার সরকার ও শ্রী তপন সরকার।
শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে পৌরসভার ইস্পাহানী এলাকার স্থানীয় এক প্রভাবশালী সেলিম গং দের বিরুদ্ধের এমন অভিযোগ করেন সেই হিন্দু পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, উপজেলার পৌরসভার ইস্পাহানী এলাকায় বসবাস করেন সংখ্যালঘু কিছু হিন্দু পরিবার। তাদের মধ্যে বসবাস করেন মৃত সভিষ চন্দ্র সরকারের শ্রীর দুই ছেলে শ্রী স্বপন সরকার ও তার ভাই শ্রী তপন সরকার। পাশাপাশি বসবাস করেন তাদের চাচাত ভাই মৃত শ্রী মেকোরাম সরকারের ২ ছেলে শ্রী উপেন্দ্র সরকার ও শ্রী বীরেন্দ্র সরকার। তাদের মধ্যে স্বপন সরকার ও তার ভাইয়ের পৈত্তিক সম্পত্তি হয় ১১৪ শতাংশ। আর মেকোরাম সরকারের ২ ছেলে শ্রী উপেন্দ্র সরকার ও শ্রী বীরেন্দ্র সরকারের সম্পত্তি হয় ৬৩ শতাংশ।
মৃত্যুর আগে ১৯৭৯ সালে বীরেন্দ্র সরকার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এতে তার সম্পত্তির মালিক হয় তার ভাই উপেন্দ্র সরকার। তার ব্যক্তিগত মোট সম্পত্তি হয় ৬৩ শতাংশ। তার সম্পত্তির পরিমান থেকে উপেন্দ্র সরকার কৌশলে বিআরএস মুল্যে বেশি জমি বিক্রয় করে দেন স্থানীয় সেলিম মিয়া, পিন্টু ও জাহাঙ্গীরের কাছে। পরবর্তীতে সেলিম মিয়া নিজের জমি বোঝ করে নিতে চাইলে উপেন্দ্র সরকার চাচাত ভাই শ্রী স্বপন সরকার ও তপন সরকারের জমি দেখিয়ে দেন। পরে সেলিম সেই জমিতে জোর করে অবস্থান নিতে যায় চায়। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আদালতে মামলা মোকাদ্দমা চলে। মামলাতে শ্রী স্বপন সরকার ও তপন সরকার পক্ষে রায়দেয় আদালত। তাদের মোট সম্পত্তির দাগ নং- ২৪৭/২৮৭/২৮৮।
এদিকে চলমান গত শনিবার (৫ আগস্ট) আওয়াম লীগ সরকার পতনের পরদিন সেলিম মিয়ার নেতৃত্বে পিন্টু মিয়া ও জাহাঙ্গীর সহ ৫০/৬০ জন লোক অর্তকৃত হামলা করে সংখ্যালঘু পরিবার শ্রী স্বপন ও তপন সরকারের বাড়ি ঘরের উপড়। এসময় তাদের বাড়ি আশপাশের ফাঁকা জমি গুলো জোর করে দখল করে এবং বেগু মেশিন দিয়ে মাটি ভরাট করে দখল করেন। এসময় তাদের হামলায় শিখার হয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শ্রী তপন সরকার ও স্বপন সরকারের পরিবার। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এঘটনায় সরিষাবাড়ী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শ্রী স্বপন সরকার।
ভুক্তভোগী শ্রী স্বপন সরকার বলেন, সেলিম মিয়া, পিন্টু, জাহাঙ্গীর যার জমি কিনেছেন তাদের কোন জমি নেই। আমার চাচা হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছেন অনেক বছর আগে। আইন অনুযায়ী ধর্ম পরিবর্তন করলে তার পৈতিক কোন সম্পত্তির মালিক থাকে না। তার ছেলে যে জমিটা বিক্রয় করেছেন সেটার মালিক সে নয়। এখন সেলিম মিয়া উপেন্দ্র সরকারের জমি না পেয়ে আমাদের জমি দখল করেছেন। কাগজপত্র মোতাবেগ জমি আমাদের। আমরা সংখ্যালঘু হিসেবে আইনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।
ভুক্তভোগী শ্রী দয়া রানী বলেন, এসব জমি আমাদের। তার কাগজপত্রও আছে। আ’লীগের ক্ষমতা ছাড়ার পরই আমাদের উপড় হামলা করে জোর করে জমি দখল করছেন সেলিম। জোর করে মাটি ফেলে ভরাট করছেন খালি জায়গা। তাদের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আমার স্বামী।
এ ঘটনায় প্রভাবশালী সেলিম মিয়া বলেন, টাকা দিয়ে জমি কিনেছি। তাদের জমি আমি জোর করে নেইনি। আমার কাছে জমির ক্রয়ের কাগজপত্র রয়েছে। তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। আমরা তাদের বসতে বলি কিন্তু তারা বসতে চাই না।
এ-বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মুশফিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেখানে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আদালতে মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধান করার জন্য বলা হয়েছে।