সরিষাবাড়ী

মাদক পরিস্থিতি ভয়াবহ: বাড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিরোধ বাড়িয়ে দিচ্ছে মাদক। ভাইয়ে-ভাইয়ে, বাপ-বেটায় বিরোধের মূলে রয়েছে এই মাদক। ফেনসিডিল, গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা, কোকেন, মারিজুয়ানা সেবনের পাশাপাশি বেড়েছে কাশির সিরাপ ও ঘুমের ওষধের ব্যবহার। মাদককে সকল অপকর্মের মূল বলে অবিহিত করেছেন সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহব্বত কবীর।

তিনি বলেন, থানায় যেসব মামলা হচ্ছে তার অর্ধেকই মাদক মামলা। ২০ থেকে ৩০ বছর আগে নির্ধারিত কয়েকটি গোত্র মদের পান করত। তারা নিজেরাই এ মদের তৈরি করত। যাকে আমরা চুলাই মদ বলে থাকি। চুলাই মদ এখন আর ওই গোত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নানা গোত্রের মানুষ এ চুলাই মদ সংগ্রহ করে পান করছে। মাদকের চাহিদা, সরবরাহ ও ব্যবহারজনিত ক্ষতি কমিয়ে আনতে কাজ করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন। এ লক্ষ্যে উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সভা-সেমিনার করে শিক্ষার্থীদেরকে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। পুলিশের কাজ হলো- শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। এ দায়িত্ব পালনে যে সময় ব্যয় হয়। তারচেয়ে অনেক বেশী মাদক সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ব্যয় করতে হচ্ছে বলেও তিনি আরো জানান।

জানা যায়, বর্তমান সরকার মাদকাসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাদক পাচার ও ব্যবসা চালিয়ে আসছে। একদিকে মাদকের আগ্রাসন অন্যদিকে নানা শ্রেনী-পেশার মানুষ মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে যুব সমাজসহ জাতিকে মাদকের ভয়াবহতার থেকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নে নোডাল এজেন্সী হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। মাদক পাচারকারী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা আরো জোরদার করতে হবে বলে অনেকে মনে করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ঘুম না আসায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অনেকে ঘুমের ঔষধ সেবন করেন। তাতে চোখে ঘুম না এলে পরের রাতে দুটি ঘুমের ঔষধ সেবন করেন। এভাবে প্রতিদিন ঔষধের পরিমান বাড়াতে থাকেন। পরে ঘুমের ঔষধ না খেলে তার আর ভাল লাগে না। এভাবে অনেকে ঘুমের ঔষধে আসক্ত হয়েছে পড়ছেন। আবার অনেকে কাশির সিরাপকে বেশী মাত্রায় সেবন করে মাদকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন। পরিবারের কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে ওই পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যায় বলেও তিনি জানান।

উপজেলার সাতপোয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, পরিবার থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা গেলে মাদক নিয়ে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ কমে আসবে। তিনি আরো বলেন, ওয়ার্ড ভিত্তিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা, পাড়া-মহল্লায় মাদক বিরোধী লিফলেট বিতরণ ও সভা-সেমিনারের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশার মানুষকে সচেতন করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের স্বদিচ্ছা থাকলে মাদকের ব্যবহার ও সরবরাহ কমিয়ে আনা সহজ হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসা বলেন, ফেনসিডিল একটি কার্যকর কাশির সিরাপ ছিল। এটাকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করায় সরকার তা বন্ধ করে দিয়েছে। মাদকের অপব্যবহার রোধে প্রশিক্ষন কর্মশালার মাধ্যমে বিভিন্ন পেশার মানুষকে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পাঠান বলেন, প্রতি মাসে অন্তত ১০টি মাদক সংক্রান্ত সালিশ বৈঠক করতে হয়। মাদক কেনার টাকার জন্য বাপ-বেটায় মারামারি আবার কখনো ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ-মারামারি। এই মাদকের কারনে প্রতিটি সমাজে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। কোন রাজনৈতিক নেতাকর্মী মাদক কারবারের সাথে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাদক দেশ ও দশের জন্য ক্ষতিকর। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নানাভাবে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের চাহিদা কমিয়ে আনতে কর্ম পরিকল্পনা (ফিজিক্যাল-ননফিজিক্যাল) হাতে নেওয়া হয়েছে। মাদকের সরবরাহ ও ব্যবহার জনিত ক্ষতি কমিয়ে আনতেও কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker