টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ডাকাতির অভিযোগে গণ পিটুনিতে নিহতের ঘটনায় আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যা মামলা দায়ের হওয়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। জানাগেছে, সম্প্রীতি কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামে রাতে ডাকাতি করতে গিয়ে গণ-পিটুনির শিকার হয় ফরিদ মিয়া।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে তার বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ১২ জনকে বিবাদী করে কালিহাতী আমলী আদালতে ৩০২ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত ফরিদ মিয়া সখীপুর উপজেলার কালিয়ান গ্রামের মৃত কদ্দুছ মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়,গত ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখ রাতে কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামের আবু তাহেরের বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা চালায় একদল ডাকাত। বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মসজিদের মাইক দিয়ে মাইকিং করা হয়। লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হলে ডাকাতদল পালিয়ে গেলেও পুকুরের পানার নিচ থেকে জণগনের হাতে আটক হোন ফরিদ মিয়া।
পরে উত্তেজিত জনতা ফরিদকে পুকুর থেকে তুলে বেধড়ক মারপিট করে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়।আহত ফরিদকে স্থানীয়রা কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তিনদিন পর চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান ফরিদ মিয়া। এঘটনায় ফরিদের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে কালিহাতী আমলী আদালতে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পলাশতলী গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মালেক,নাজিম উদ্দিন,মো.শাজাহান মিয়া,শুকুরী বেগম,আনোয়ারা বেগম,ছানোয়ার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি জানায়, ডাকাতির অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যাওয়া ফরিদ একজন পেশাদার চোর। চুরি ছিনতাই করাই তার পেশা। এলাকায় সে ছেঁছরা ডাকাত হিসেবে পরিচিত।
তার নামে সখিপুর থানায় একাধিক মারামারি, হত্যা, চুরি-ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। দেশে চলমান রাজনীতির পট পরিবর্তন হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা কিছুটা অবনতি হলে সেই সুযোগটি কাজে লাগান ফরিদ।
তারা জানান, গত ডিসেম্বর মাসে প্রথম দিকে কালিহাতী উপজেলার পলাশতলী গ্রামে আবু তাহেরের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়েন। লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে ঘটনাস্থলে একত্রিত হোন,একপর্যায়ে ডাকাত দল দৌড়াইয়া পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ফরিদ নামের এক ডাকাত পুকুরে নেমে পানার নিচে লুকিয়ে থাকে। খোঁজাখুজির পরে পুকুর থেকে তুলে আনে উৎসুক জনতা। পরে জনরোষের শিকার হয় ফরিদ।
একপর্যায়ে স্থানীয় মাতাব্বরগন ফরিদকে চিকিৎসার জন্য কালিহাতীতে পাঠায়। সেখান থেকে টাঙ্গাইল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কয়েকদিন পর তিনি মারা যায়। এই সুযোগে একটি কুচক্রি মহলের মদদে নিহত ফরিদের ভাই বাদী হয়ে কালিহাতী উপজেলার পলাশতলী গ্রামের আবু তাহেরসহ ১২ জনকে বিবাদী করে একটি হত্য মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি বর্তমানে তদন্তধীন থাকায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।এ মামলার ৩নং বিবাদী আব্দুর রহমান রতন জানান,এ ঘটনার সময় তিনি কুষ্টিয়া শহরের মাজমপুর এলাকায় ছিলেন।তার দাদী টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে অসুস্থ জনিত কারণে ভর্তি থাকায় তাকে দেখতে আসেন। এক পর্যায়ে মামলার বাদী পূর্ব পরিচিত হওয়ায় গণপিটুনিতে নিহত ফরিদের লাশ হাসপাতাল থেকে হস্তান্তরের স্বাক্ষরও করেন।
নিহত ফরিদের ভাই মো.শহিদুল ইসলাম জানান,তার ভাইয়ের সাথে পলাশতলী গ্রামের ড্রেজার ব্যবসায়ীদের সাথে বিরোধ চলছিলো। সেই আক্রোশে ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে কৌশলে তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মোহাম্মদ আবুল কালাম ভুঁইয়া মুঠোফোনে জানান, মামলাটি তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।