টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে পৌর মেয়রের গাড়ি বহরে আ’লীগ কর্মীদের হামলায় আহত ১২

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি ও ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়রের কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় সাংবাদিকসহ ১২ জন আহত হয়েছে। এ সময় দুইটি প্রাইভেটকার ও ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

জানা গেছে, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র এবং টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনে এমপি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি মাসুদুল হক মাসুদ নেতাকর্মীদের নিয়ে গোপালপুর উপজেলার আলমনগর বোর্ড বাজার এলাকায় যাচ্ছিলেন। তারা আলমনগর বোর্ড বাজারের নির্ধারিত স্থানে প্রবেশের সময় বর্তমান এমপির সমর্থক আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তাদের গাড়ি বহরে আতর্কিত হামলা চালায়। পরে তারা ভূঞাপুর ফিরে আসার সময় মির্জাপুর ইউনিয়নের বড়শিলা গ্রামে স্থানীয় আ’লীগের কর্মীরা আবার হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আহত নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন- ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, ভূঞাপুর পৌর আ’লীগের সভাপতি আব্দুল বাছেদ মন্ডল, ভূঞাপুর পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য খায়রুল ইসলাম বাবলু, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেন এবং গোপালপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বড়শিলা গ্রামের আ’লীগ কর্মী দেলোয়ার হোসেন। তাদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেনকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল ও অন্যদের ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্য চার জনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। হামলায় আহত সাংবাদিকরা হচ্ছেন- ঢাকাপোস্ট ডটকমের জেলা প্রতিনিধি অভিজিৎ ঘোষ, ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরা পারর্সন আশিকুর রহমান ও ঢাকা প্রকাশের জেলা প্রতিনিধি ফরমান শেখ। পরে হামলাকারীরা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করে।

হামলায় আহত সাংবাদিক ফরমান শেখ জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি ও ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ গোপালপুরের বিভিন্ন জায়গায় কম্বল ও সরকারের উন্নয়নমূলক লিফলেট বিতরণ করার জন্য আলমনগর যাচ্ছিলেন। পথে তার গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়। সাংবাদিকরা ওই হামলার ভিডিও ধারণ করায় তিনজন সাংবাদিকের উপরও হামলা চালানো হয়।

আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি এবং ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মাসুদুল হক মাসুদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড মানুষজনকে জানানোর জন্য তিনি লিফলেট ও কম্বল বিতরণ করতে যাচ্ছিলেন। এসময় স্থানীয় এমপি ছোট মনিরের নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনীরা তাদের উপর হামলা চালায়। হামলায় নেতৃত্ব দেয় গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার সুরুজ। হামলায় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এসময় দুইটি প্রাইভেটকার ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

অভিযুক্ত গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার সুরুজ জানান, মাসুদুল হক মাসুদ ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র। তিনি গোপালপুরে কম্বল বিতরণ করবেন সেটি ভালো কথা- কিন্তু এই বিতরণের বিষয়টি তাদের জানানো হয়নি। বিষয়টি আলমনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মেনে নিতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে ধাওয়া দিয়েছে। কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি।

তিনি আরও জানান, ওই ঘটনায় তার নাম জড়ানো হলেও তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। বর্তমান এমপির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তাকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, হামলার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। হতাহতের বিষয়ে কোন অভিযোগ না পাওয়া গেলেও কিছু যানবাহনে ভাংচুর চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় গুলি বা ককটেল বিষ্ফোরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তিনি ঢাকায় রয়েছেন। গোপালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের না জানিয়ে ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়রের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কর্মীদের নিয়ে কম্বল বিতরণ করতে যাওয়া সমীচীন হয়নি।

এদিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে মেয়র মাসুদুল হক মাসুদের নেতৃত্বে ভূঞাপুর পৌরসভা এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করা হয়। সভায় মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির এমপিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker