মাদারীপুর

ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা দিশেহারা

কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ঢাকার বাড্ডার লিংকরোড এলাকায় নিহত হন শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব (১৮)। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তান আহমেদ শিহাব যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো তখনই সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজে পাঠিয়ে দেন তার বাবা-মা। শিহাব সেখানে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করতো। বেতন যা পেতো নিজের খরচ রেখে বাকিটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিত। প্রায় ৮ বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কাঁধে আঘাত পেয়েছিলেন হৃদয় আহমেদ শিহাব। এরপর থেকে সে ভারী কোনো কাজ করতে পারতেন না। এরপরই দেখা দেয় আবার হার্টে সমস্যা। এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসারে দেখা হয় আর্থিক টানাপড়েন। শেষে হাল ধরতে বাধ্য হন স্ত্রী নাছিমা বেগম। সেলাই এর কাজ করে কোনোমতে চলত সংসার।

শুক্রবার রাতে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামে বাড়িতে মরদেহ এসে পৌঁছালে শোকের মাতম দেখা দেয়। তার মা ও বাবা শিহাবের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে অনেকটায় ভেঙে পড়েছেন। বাকরুদ্ধ বাবার নিরবতা ও মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে বাড়ির পরিবেশ। পরে শনিবার তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

সরেজমিনে মঙ্গলবার নিহত শিহাবের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সন্তান হারিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা নাছিমা বেগম । এদিকে বাবা শোকে বাকরুদ্ধ নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকছেন ঘরের এক কোনে। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে বোন আর্তনাদ করে উঠছেন, স্বজন-প্রতিবেশীরা শোকে আচ্ছন্ন। বাড়ির পাশের কবরস্থানে এসে ভিড় করছেন স্বজনেরা। দাদা রফিক হাওলাদার একমাত্র নাতিকে হারিয়ে এখন প্রলাপ বকছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বাড্ডার লিংকরোড এলাকার তার ফুপাতো ভাই মনির মোল্লার; হাসান স্টিল এন্ড ফার্নিচার; দোকানে কাজ করতো শিহাব। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষ করে মনির মোল্লার বোনের বাসায় দুপুরের খাবার খেতে আসে সে। খাবার শেষেই পাশেই কারখানাতে (ফার্নিচার) ফিরতে আসার সময়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় সড়ক। সেই সময়ে শিহাবের শরীরে একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয়। সেই গুলিটি বুকের পাশ দিয়ে বিদ্ধ হয়ে ওপর পাশ দিয়ে বেড়িয়ে যায়। এসময়ে ওই এলাকার মসজিদের এক ইমাম (পূর্ব পরিচিত) সাথে ছিলেন শিহাবের। সে খবর দিয়েছেন ফার্নিচার দোকানে। পরে খবর পেয়ে ফার্নিচার দোকানের মালিক ফুপাতো ভাই মনির মোল্লা দ্রুত স্থানীয় এক হাসপাতালে যায়। সেখানে সে শিহাবকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে বনশ্রী এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মনির মোল্লা বলেন, আমার দোকানে কাজ করতো শিহাব। দুপুরে খাবার খেয়ে কারখানায় ফেরার পথে সেই সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। বুকের এক পাশ থেকে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। তখন হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি। কোনো হাসপাতাল ভর্তি করতে চায়নি! চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেলো।

নিহত শিহাবের চাচা সাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল শিহাব। আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিল শিহাব।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত শিহাবের মা নাছিমা বেগম বলেন, আমার ছেলে দুপুরে খাইয়া কারখানায় যাইতেছিল। ওই তো আন্দোলন করে নাই। ওরে কেনো গুলি কইরা মারলো? আমার একমাত্র ছেলে! আমি এখন কি নিয়া বাঁচমু। আমার বাবার কাছে আমারে নিয়া যাও।

জানতে চাইলে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। সব কিছু স্বাভাবিক হলে ওই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।

Author

দ্বারা
মাসুদ রেজা ফিরোজী মাদারীপুর, জেলা প্রতিনিধি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker