কিশোরগঞ্জ

জেনে নিন, নিরব ঘাতক পার্থেনিয়াম আগাছা

মাহফুজ হাসান,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
আনমনা দাঁড়িয়ে হাজারও বৃক্ষরাজি সবুজ শ্যমলিমায় আচ্ছাদিত স্বদেশীয় প্রকৃতি। রাস্তার দুইধারে, ফসলের ক্ষেতের পাশে সবুজ ঝোপ। আপাতদৃষ্টিতে এ যেন সবুজের সমারোহ। এই সবুজ রাজ্যের মাঝে লুকিয়ে রয়েছে হাজারও উপকারী গাছ বা লতা যেমন,তেমনই আছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর মানুষকে মৃত্যুর কোলে তুলে দেওয়ার মতো আগাছা পার্থেনিয়াম। পার্থেনিয়াম এর আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ওয়েষ্ট ইন্ডিজ এবং উত্তর-পূর্ব মেক্সিকো।
বিভিন্ন সূত্রমতে জানা যায়- পার্থেনিয়ামের সংস্পর্শে মানবদেহে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ব্রংকাইটিস সহ দেখা দিতে পারে নানা ব্যধি। গবাদিপশুর জন্যও এটি প্রাণঘাতী। 
তথ্য পাওয়া যায়,প্রতিবেশী দেশ থেকে দানাদার খাদ্য কিংবা গরুর খুরের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এটি বেশি নজরে পড়ে সীমান্তবর্তী জেলার রাস্তার দুধারে। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন জেলাতে রাস্তার দু-ধারে এবং ফসলের খেতেও ছড়িয়ে রয়েছে। গাছটির আয়ুষ্কাল মাত্র তিন-চার মাস। এ আয়ুষ্কালের মধ্যে তিনবার ফুল ও বীজ দেয় গাছটি। ফুল সাধারণত গোলাকার, সাদা, পিচ্ছিল হয়। 
 এই উদ্ভিদে থাকে ক্যাফেইক এসিড যা ক্ষত স্হানে রক্তের সাথে মিশে চর্মরোগ থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এই বিষাক্ত আগাছা এক ধরনের রাসায়নিক নি:সরণ করে যা অন্যান্য ফসলের বৃদ্ধি হ্রাস করে। এর ফুলের রেনু বা বীজ নাকে প্রবেশ করলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হয়। তাছাড়া গবাদিপশু এই আগাছা খেলে মুখে,তন্ত্রে ও যকৃতে ঘা ও পচনসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। আক্রান্ত গবাদিপশুর মাধ্যমেও মানব দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 
কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, আগাছা নাশক দিয়েও গাছটি মারা সম্ভব নয়। এজন্য গাছটিকে পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার নির্দেশ। সতর্ক না হলে যেকোনো ব্যক্তি বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন-এটি কেউ কাটতে গেলে ওই ব্যক্তির হাতেপায়ে লাগতে পারে। পোড়াতে গেলে ফুলের রেণু দূরে উড়ে বংশবিস্তার করতে পারে। আবার ব্যক্তির নাকে-মুখেও লাগতে পারে। তাতে তিনি মারাত্মক বিষক্রিয়ায় পড়তে পারেন। সে ক্ষেত্রে সাবধানতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১ লিটার পানিতে ১৫০ গ্রাম লবন মিশিয়ে স্প্রে করলে এই বিষাক্ত আগাছা নির্মূল করা সম্ভব।
জনসাধারণকে এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে চিকিৎসক, বিজ্ঞানকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনকেও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে, একে কীভাবে নির্মূলকরন করা যায় সে বিষয়ে। এইসব যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই মঙ্গল। যেভাবে এই আগাছাটি দূর্বার গতিতে বিস্তার করছে তাতে আগামীদিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে সেকথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এই ক্ষতিকর আগাছাটির সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে ও আগাছাটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker