মাহফুজ হাসান, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
সাধারণত হাটের দিনগুলোতে আব্দুস সালাম (৪০) এর ব্যস্ততা চোখে পড়ার মত। এক হাটে যা আয় হয়, তাতেই অন্তত তিন-চার দিন নিশ্চিন্তে কেটে যায় সালামের সংসারের। সালামের মাজনের ব্যবসা। উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানো, সবই সালামের কাজ। প্রতিদিন রিক্সা করে ছুটে চলেন বিভিন্ন হাট-বাজারে।
বলছি কিশোরগঞ্জরের হোসেনপুর উপজেলার পাগলা বাজারস্ত বেপারি পাড়ার ওয়াহেদ আলীর ছেলে আব্দুস সালামের কথা। বিভিন্ন গাছগাছড়া, লতা-পাতা দিয়ে নিজেই তৈরি করেন চমৎকার দাঁতের মাজন।
ছোট বেলা থেকেই তিনি এ পেশায় জড়িত। তার দুই ছেলে এক মেয়ের পড়ালেখাসহ সংসারের যাবতীয় চাহিদা মিটিয়ে বেশ আয়েশে চলেন সালাম মাজন বিক্রির টাকায়।
খুবই রসিক মনা মানুষ, কেউ তাকে ডাকে দাঁতের ডাক্তার, কেউবা ডাকে মেজিশিয়ান, আবার কারও কাছে সালাম নামেই পরিচিতি।
জানা যায়- দাঁত ব্যথা, দাঁতের রক্ত পড়া, দাঁত নড়া, মাড়ি ফুলা ভাবসহ বিভিন্ন দাঁতের অসুখের যাদুকরি সমাধান সালামের ভেষজ মাজন।এছাড়াও দাঁতকে নিমিষেই করে চাকচিক্য। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে হাঁটবার গুলিতে ক্যানভাসের মাধ্যমে মাজন বিক্রি করে থাকেন।গড় আয় ২/৩ হাজার টাকা।
মাজনের ফেরি করতে একজন রিক্সা চালককে সাথে রাখেন তাকেও দেন পুষিয়ে।
সালাম জানে প্রচারেই প্রসার।যতো ভালোই হোক প্রচার ছাড়া তার এই মাজন কেউ কিনবে না। তাই প্রচারের জন্য একটা হ্যান্ড মাইক, ভেল্কি বা ম্যাজিক দেখানোর বাক্স,যাতে রাখেন যাদু খেলার সরঞ্জামাদি। একটা সুন্দর ধবধবে সাদা পোষাকও আছে সালামের। পোষাক বলতে সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট, সাদা জুতা এবং একটা সাদা ক্যাপ, ক্যাপটা অনেকটা ট্রেনের গার্ডসাহেবদের মতন।লুপ্ত সিজনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে গিয়েও ম্যাজিক দেখিয়ে উপার্জন করেন।
দীর্ঘদিন এ পেশায় থাকায় তার কিছু নিয়মিত গ্রাহকতো আছেই। যারা গত হাটে নিতে পারেনি, তারাতো আজ আসবেই। এ ছাড়াও প্রতিদিন বাড়ীতেও আসেন অনেক রোগী। সালামের কোন সহযোগি নাই। সব কাজ একাই করতে হয়। বিভিন্ন হাটে গিয়ে প্রথমেই সে একটি নির্ধারিত যায়গায় সাদা চুনের গুড়া দিয়ে গোলাকার এলাকা নির্ধারণ করে। তারপর তার ব্রিফকেসটা মাঝখানে রাখে, পাশেই রাখে ম্যাজিকের বাক্সটি, ব্রিফকেস থেকে মাজনগুলো বের করে ব্রিফকেসের ওপরেই সাজায় মাজনের প্যাকেটগুলি।
এবার হ্যান্ড মাইকটা হাতে নিয়ে, দাঁত থাকার গুণাবলি ও দাঁত পরিষ্কার রাখার গুণাবলী বর্ণনা করতে থাকে। যাদের দাঁত নাই তাদের পৃথিবীতে কিছুই নাই। গোসতো খেতে পারে না। আবার যার দাঁত ময়লা, মানুষ তাদের পছন্দ করে না, কাছে গেলে দুর্গন্ধ লাগে ইত্যাদি। কথার ফাঁকে ফাঁকে কৌতুক বলে আর চমকপ্রদ ম্যাজিক প্রদর্শন করে। আর জনতা হো হো করে হেসে ওঠে,আবার ভেল্কিবাজির কৌশল দেখে অনেকে ভয় পায়। জনতা খুবই মজা পায়। এবার দ্রুত চাহিদা বেড়ে যায়। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে মাজন কেনার জন্য।
আব্দুস সালাম জানান,,ছোট বেলা থেকেই যাদুর খেলা ও কথার চাতুরতায় মানুষকে হালাল বিনোদনের মাধ্যমে আকৃষ্ট করি পাশাপাশি নাম মাত্র মূল্যে এ মাজন বিক্রি করে বেশ আরামে আছি।পৃথিবীতে কাজ কোনোটা ছোট নয়!যার যে কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তা নিয়েই বসে না থেকে কাজে লেগে যাওয়া উচিত।তবে হয়তো বেকারত্ব সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে।