গাজীপুরের কালিয়াকৈর বিশ্বাসপাড়া এলাকা থেকে নিখোঁজের তিনদিন পর গত ২৪ জানুয়ারি আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের কলতাসুতি কবর স্থানে আরিফ হোসেন (১৯) নামের যুবককে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনার মূলহোতা সহ চার হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে আশুলিয়ার বাইশমাইল এলাকায় র্যাব -৪ সিপিসি ২ এর ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ৪ সিপিসি ২ সাভার নবীনগর ক্যাম্প এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান জানান, গত ২৪ জানুয়ারি আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের কলতাসুতি গ্রামের কেন্দ্রীয় গণকবরের ভিতর বিবস্ত্র একটি লাশ পাওয়া যায় এবং স্থানীয় প্র্রতিনিধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করলে আশুলিয়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে র্মগে পাঠায়।
নিহত আরিফ সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর থানার বাজরা গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে এবং সে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বিশ্বাসপাড়া এলাকায় আরএল ডাইং কারখানার চাকুরি করতো। গত ২১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যায় বিশ্বাসপাড়া এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে বের হয়ে সে আর বাসায় ফিরেনি। নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন আত্বীয় স্বজনের বাড়ি ও সম্ভব্য স্থানে খোঁজা খুঁজি করে না পেয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে বিকেলে নিহত আরিফের ফুফু জানতে পারে যে আশুলিয়া থানা অজ্ঞাতনামা একটি লাশ উদ্ধার করেছে। তাৎক্ষনিক নিহতের ফুফু আশুলিয়া থানায় এসে অজ্ঞাতনামা লাশটি আরিফ (১৯) এর বলে সনাক্ত করে। ভিকটিমের বড় ভাই তালেব মিয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে র্যাব-৪ হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে ।পরে তৎক্ষণাৎ তারা তদন্ত শুরু করলে অপরদিকে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ২৮ জানুয়ারি তারিখে আশুলিয়ার জামগড়া, গাজীপুরের সাতাইশ চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস আরিফ হত্যাকান্ডের মূল হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব -৪।
র্যাব-৪ কমান্ডার আরও জানান, হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত মূলহোতা হলো রাজশাহী জেলার সেন্টু সরদার (৩৫) এবং তার সহযোগী দিনাজপুর জেলার মো: জমির উদ্দিন (৩৩), সুনামগঞ্জ জেলার রাব্বি আহম্মেদ (২৪) এবং টাঙ্গাইল জেলার মো: জহিরুল ইসলাম (৩৫)।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটক আসামি সেন্টু সরদারের সাথে গাজীপুরের একটি গামের্ন্টসে চাকুরীর করার সুবাদে নিহত আরিফের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে আরিফ গামের্ন্টস এ চাকুরী পাওয়ার জন্য সেন্টুর সাথে যোগাযোগ করে। তখন সেন্টু সরদার (ভুয়া জিএম) জমির উদ্দিন এর মোবাইল নম্বর দেয় ও তার সাথে যোগাযোগ করতে বলে। পরে আরিফ জমির উদ্দিন এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে জমির উদ্দিন গত ২১ জানুয়ারি আশুলিয়া এলাকায় দেখা করার জন্য বললে। আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ও সুকৌশলে আরিফকে কলতাসুতি গ্রামের কেন্দ্রীয় গণকবরের ভিতর নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় এবং নিহতের মুখ চেপে ধরে ও পরে পরিহিত প্যান্ট খুলে হাত-পা বেধে মোটা অংকের টাকা দাবী করে। এ সময় আরিফ টাকা দিতে অস্বীকৃত জানালে ও ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আসামিরা আরিফের গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর লাশটি কবরস্থানের নির্জন এলাকায় ফেলে তারা ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিরা এই ঘটনার সাথে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। আসামীরা পেশাদার চাঁদাবাজ ও প্রতারক চক্র, তারা সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন গামের্ন্টস এর ভুয়া জিএম, সুপার ভাইজার পরিচয়ে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। এ ধরণের অপরাধ দমন ও জনসাধারণের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তায় র্যাব-৪ এর অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ৪ সিপিসি ২ সাভার নবীনগর ক্যাম্প এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.