গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পুবাইল থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন গত ১৯ বছর পর আগামী রোববার অনুুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনকে ঘিরে এলাকার নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সম্মেলনের স্থান হিসেবে পূবাইল আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানেও বিরাজ করছে আনন্দ মূখর পরিবেশ। পুরো কলেজ প্রাঙ্গন ভরে গেছে ব্যানার আর ফেস্টুনে। শুধু কলেজ প্রাঙ্গনই নয়, কলেজের আশপাশের এলাকা ও সড়কগুলোতে ব্যানার- ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। সব মিলিয়ে পুরো পূবাইল এলাকায় এখন সাজ সাজ ভাব।
সম্মেলনকে ঘিরে ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে ব্যাপক বিচার বিশ্লেষন। কে পাচ্ছেন নতুন নেতৃত্ব? তবে নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য এরই মাঝে পদ প্রত্যাশীদের দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি, বিতর্কিতরা যেন না পায় দলের নেতৃত্ব। বিতর্কিতরা দলের দায়িত্ব পেলে তৃণমুলে দলের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। দীর্ঘদিন পর হতে যাওয়া এ সম্মেলনে সভাপতি পদ নিয়ে চলছে সবচেয়ে বেশি আলোচনা। দায়িত্বশীল এই পদটিকে ঘিরে এখনো পর্যন্ত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এম জাহিদ আল মামুন ও সদস্য মো: আজিজুর রহমান শিরিষের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মোঃ মোমেন মিঞা, শাহিন মৃধা ও আমজাদ হোসেন মোল্লার নাম শোনা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, সভাপতি পদ প্রত্যাশী এম জাহিদ আল মামুন গাজীপুর মহানগর আ’লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সক্রিয় ভূমিকার পাশাপাশি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও রয়েছে তার সুসম্পর্ক। সে হিসেবে তৃণমূল দলের তরুণ ও প্রবীণ নেতৃবৃন্দের কর্মীদের পছন্দের তালিকায় সভাপতি হিসেবে রয়েছে এম জাহিদ আল মামুনের নাম।
অন্যদিকে, সভাপতি পদ প্রত্যাশী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো: আজিজুর রহমান শিরিষ এলাকায় সরকার দলীয় নেতা হিসেবে পরিচিত। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তিনি সেই দলেই যোগদান করেন।
আজিজুর রহমান শিরিষ রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন জাসদ দিয়ে। পরে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এলে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিএনপিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে আ’লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি পুনরায় আবার দল পরিবর্তন করে হয়ে যান আওয়ামী লীগার। ১৯৭৩ সালে পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদে বিজয়ী হন শিরিষ। পরে ১৯৮৩ সালে আহসান উল্লাহ মাষ্টারের সাথে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ১৯৮৭ সালে পুনরায় আহসান উল্লাহ মাষ্টারের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে সময় ভোট গ্রহণের দিন মেঘডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পরিদর্শনে আসলে আজিজুর রহমান শিরিষ পরাজিত হওয়ার ভয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আহসান উল্লাহ মাষ্টারের উপর হামলা চালয়।
সম্মেলনে আরেক সভাপতি পদ প্রত্যাশী মো: আজিজুর রহমান শিরিষের ব্যবহৃত মুঠো ফোনে একাধীকবার ফোন দিয়ে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার প্রতিক্রীয়া জানা সম্ভব হয়নি।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী মোঃ মোমেন মিঞা বর্তমানে গাসিক ৪১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। সাবেক ছাত্রনেতা ও সমাজসেবক হিসেবে এলাকায় রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি।
সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী শাহিন মৃধাও বর্তমানে গাসিক ৩৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে তারও এলাকায় রয়েছে বেশ পরিচিতি।
সম্মেলনে আরেক সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী আমজাদ হোসেন মোল্লা বিগত দিনে পূবাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাবেক যুবনেতা ও সমাজসেবক হিসেবে এলাকায় তার রয়েছে অন্যরকম ইমেজ। দলের দুর্দিনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুখে-দুঃখে তিনি যোগাযোগ রাখেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন সৎ ও দক্ষ সংগঠক এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব এম জাহিদ আল মামুন জানান, বাসন থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পুরো পুবাইল থানা আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এ সম্মেলনে শত শত নেতাকর্মী অংশ নিবেন প্রত্যাশা করছি। এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে কর্ণেল ফারুক খান এমপি ও বিশেষ অতিথি হিসাবে মীজা আজম এমপিসহ কেন্দ্রী ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের বক্তৃতা করার কথা রয়েছে।