মিজানুর রহমান চলাচলে অক্ষম হলে কি হবে। শারীরিকভাবে চলাচল করার শক্তি না থাকলেও মনের জোড়ে এবারের মৌচাক ইউপি নিবার্চনে ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী হয়ে নিবার্চনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তার চাহিদা মোতাবেক প্রতীকের জন্য একাধিক প্রার্থী থাকায় উপজেলা নিবার্চন কর্মকর্তার লটারী দেন। সেখানে তার চাহিদা “মোরগ” প্রতীক পেয়ে যান। প্রতীক বরাদ্ধেও দিনই এই প্রতিবন্ধি মিজানুর রহমান এক ধাপ বিজয় অর্জনে আরো উৎসাহিত হয়ে উঠেন।
প্রতিবন্ধি মিজানুর রহমানের দুই পা বাঁকিয়ে হাতে ভর করে চলাফেরা করা শারীরিক প্রতিবন্ধী গাজীপুরের কালিয়াকৈর মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মেম্বার পদে ভোটযুদ্ধে মাঠে চমক দেখাচ্ছে। মানবিক ও সাহসিক কারণে সাধারণ ভোটারা প্রতিবন্ধি মিজানুর রহমানের দিকেই ঝুকছেন।
এবারের নিবার্চনে এ ওয়ার্ড সাত সাধারণ সদস্য প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান সদস্য ও মো: লাবিব উদ্দিন (ফুলবল), দেলোয়ার হোসেন (লাটিম), ফখরুল ইসলাম মজুমদার (তালা), জয়নাল আবেদীন (আপেল), রফিকুল ইসলাম (সিলিং ফ্যান) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
এলাকাবাসী, সাধারণ ভোটার ও নিবার্চনের প্রার্থীরা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধি মিজানুর রহমান মৌচাক ইউপির ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচন করছেন। তার প্রতীক মোরগ। একই পদে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন আরও পাঁচজন। হাসি মুখে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট এবং দোয়া চাইছেন তিনি। ভোটারদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন মিজানুর। তার প্রচার-প্রচারণাও বেশ জমজমাট। প্রতিদিন গণসংযোগ আর মিছিলে মিছিলে শত শত কর্মী সমর্থক নিয়ে ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মিজানুর। নির্বাচনে জিতে সুখে-দুঃখে সবার পাশে থাকতে চান তিনি।
অবশ্য ভোটের আগেই প্রতীক নিয়ে একবার লড়তে হয়েছে মিজানুরকে। প্রতীক বরাদ্দের দিন তিনজন প্রার্থী মোরগ প্রতীক চেয়েছেন। তখন নির্বাচন কর্মকর্তা লাটারি দেন। সেই লটারিতে জিতে মোরগ প্রতীক পান তিনি। বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে বর্তমানে তিনি একজন মুদি দোকানি।
মিজানুর রহমান কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক আইসমার্কেট এলাকায় জমি কিনে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দোতলা ভবন করেছেন মিজানুর। জন্মগতভাবে মিজানুর শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার বাবা গিয়াস উদ্দিন মাঝি। শরীয়তপুর তার জন্ম। কিন্তু ২৭-২৮ বছর ধরে তিনি মৌচাক এলাকায় বসবাস করছেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার।
মৌচাক ৬নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী থাকলেও লোক হিসেবে মিজানুর রহমান একজন ভালো মনের মানুষ। তিনি প্রতিবন্ধি হয়েও মানুষের সেবা করতে সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচন করছেন। এলাকাবাসী তাকে সমর্থন করছেন।
মৌচাক এলাকার আরেক বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন শারীরিক প্রতিবন্ধি মিজানুর। তার বেশিরভাগ কর্মী দরিদ্র দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা, খেটে খাওয়া মানুষগুলোই কর্মী-সমর্থক। এলাকাবাসীর ধারনা এবারের নিবার্চনে ৬নং ওয়ার্ডে এই প্রতিবন্ধী সদস্য প্রার্থী মিজানুর রহমানই শেষ-মেষ চমক দেখাবেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।
ইউপি সদস্য প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, তার সাত ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই সেনাবাহিনীর সদস্য এবং ৫ ভাই প্রবাসে থাকেন। এ নির্বাচনে তারা সবাই তাকে সহযোগিতা করছেন।
কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ সামছুজ্জামান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্ততি চলছে। আশা করছি, সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে মৌচাক ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন। তবে, ইভিএম পদ্ধতিতে ওই ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।