অবশেষে নানা নাটকীয়তার তিনদিন পর সেই তরুণীর দায়ের করা মামলা শুক্রবার রাতে রুজু করা হয়েছে। কালিয়াকৈর থানার মামলা নং-৫ তাং ৮ এপ্রিল ২০২২। তবে পুলিশ মুল এজাহার পরিবর্তন করে এজাহারে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ও কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এসএম জুবায়ের হিমেলসহ আরো ছাত্রলীগের দুই কর্মীর নাম উল্লেখ্য করে মামলাটি রুজু করেছেন। তবে এ বিষয়ে ওই তরুণীর কোন আপত্তি নেই বলে এ প্রতিবেদককে জানান। গত রাতেই মামলা রুজু হওয়ার পর থেকেই হিমেলসহ তিন ছাত্রলীগ কর্মী পলাতক রয়েছে। পুলিশ নাকি তাদের খুঁজে পাচ্ছে না বলে দাবি করছেন। তরুণীর দাবি পুলিশের গাফলতির কারণে গত তিনদিন আগে মামলার এজাহার দিলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে হিমেলকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
পুলিশ জানান, শনিবার সকালে ওই তরুণীকে গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়েছে।
নতুন এজাহারের অভিযুক্তরা হলেন, মৌচাক এলাকার মোবারক হোসেনের ছেলে এসএম জুবায়ের হিমেল (৩০)। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী। অভিযুক্ত অন্য দুইজন হলেন, একই এলাকার মো: শাকিল (২৫), সবুজ হোসেন (২৮)।
পুলিশ, মামলার এজাহার ও তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় এক তরুণী (২২) থানায় ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওইদিন পুলিশ অভিযোগটি আমলে না নেওয়ায় তরুণী তার ফেসবুক আইডিতে লাইভে ছাত্রলীগ নেতা এসএম জুবায়ের হিমেল এর বিচার দাবী করেন। সেই লাইভ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হিমেলে পরিবার একাধিক বার পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে সমকাল একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ করলে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসলে আগের অভিযোগটি পাল্টিয়ে নতুন করে আরেকটি অভিযোগ নিয়ে আরো দুইজনকে যুক্ত করে মামলাটি রুজু করা হয়।
নতুন করে দেওয়া এজাহারে উল্লেখ্য করা হয়েছে, তিন বছর আগে হিমেলের সাথে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই সম্পর্কের জের ধরে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে একাধিকবার দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। একই সংগে তরুণীর কাছ থেকে কৌশলে প্রতারনা করে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার টাকা মুল্যের একটি আই ফোন, বিভিন্ন সময়ে ২ লাখ টাকা প্রতারনা করে হাতিয়ে নেয়।
ওই তরুণী মামলায় আরো উল্লেখ্য করেন, গত ৪ জানুয়ারী হিমেলের সহযোগি শাকিল ও সবুজের মাধ্যমে তাকে বিয়ে করার কথা বলে বাসা থেকে ডেকে হিমেলের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা হিমেলকে ওই তরুণী বিয়ে করার জন্য চাপ দিলে সে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়।
পরে গত ৬ এপ্রিল বুধবার ওই তরুণী ছাত্রলীগ নেতা এসএম জুবায়ের হিমেলকে আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। নানা নাটকীয়তার তিনদিন পর কালিয়াকৈর থানা পুলিশ শুক্রবার রাতে মুল এজাহাররটি বদলিয়ে আরো দুইজনের নাম সংযুক্তি করে একটি মামলা রুজু করেন।
ওই তরুণী জানান, আমি এখনও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আসামী পক্ষের লোকজন নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমি হাসপাতাল থেকে এসে আমার এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছি।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খান গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। ওই তরুণীকে তার বাবা মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে।