অবশেষে মহিমাগঞ্জ রেলস্টেশনে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি
পূরণ হলো বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্ন
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান! রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ রেলস্টেশনে প্রথমবারের মতো ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি নিশ্চিত হলো। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসে পৌঁছাল।
১০ মার্চ ২০২৫, রাতের প্রথম প্রহর ১:৩০ মিনিট—এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ৮১০ ডাউন বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন একেবারে নির্ধারিত সময়েই মহিমাগঞ্জ রেলস্টেশনে প্রবেশ করে। বরাদ্দকৃত দুই মিনিটের যাত্রাবিরতির পর ঢাকার উদ্দেশ্যে ট্রেনটি যাত্রা করে।
গভীর রাতেও স্টেশনের প্লাটফর্ম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, প্রবীণসহ নানা বয়সের হাজারো মানুষ নিজেদের চোখে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিলেন। এ যেন এক আনন্দ উৎসব! কেবল রেলস্টেশন নয়, পুরো মহিমাগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ ও আশপাশের এলাকাজুড়ে বইছিল উদযাপনের জোয়ার।
ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা আহসান হাবীব প্রথম যাত্রীর জন্য নিজ উদ্যোগে ট্রেনের টিকিট কিনে উপহার দেন। শুধু তিনিই নন, অনেক স্থানীয় ব্যক্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্য যাত্রীদের টিকিট কিনে দেন,
যাতে তারা এই ঐতিহাসিক ট্রিপের অংশ হতে পারেন। এটি ছিল কেবল একটি ট্রেনযাত্রা নয়—এটি ছিল এক আন্দোলনের সাফল্যের স্বীকৃতি, এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ।
সান্তাহার-লালমনিরহাট-রংপুর রেলরুটের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন মহিমাগঞ্জ দিয়ে প্রতিদিন তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করলেও এতদিন এখানে কোনো ট্রেন যাত্রাবিরতি দিত না। অথচ এই অঞ্চল শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ফলে ঢাকাগামী একটি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন ও আবেদন জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা।
অবশেষে, নতুন ৫৪ নম্বর ট্রেনের সময়সূচি কার্যকর হওয়ার পর, ঢাকা-বুড়িমারী রুটের ৮০৯ আপ ও ৮১০ ডাউন আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি নিশ্চিত করা হয়েছে মহিমাগঞ্জ রেলস্টেশনে।
নতুন সময়সূচি অনুযায়ী—
সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার: ঢাকামুখী (ডাউন) ট্রেন চলবে না।
সপ্তাহের প্রতি বুধবার: বুড়িমারীমুখী (আপ) ট্রেন চলবে না।
অন্যান্য দিনগুলোতে:
বিকেল ৩:৪৫ মিনিটে বুড়িমারীমুখী আপ ট্রেন মহিমাগঞ্জ স্টেশনে থামবে। রাত ১:৩০ মিনিটে ঢাকামুখী ডাউন ট্রেন যাত্রাবিরতি দেবে। এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া: আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও স্বস্তি ট্রেনের যাত্রাবিরতির ঘোষণা আসার পর থেকেই মহিমাগঞ্জসহ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় উচ্ছ্বাসের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে ঢাকায় যাতায়াত আরও সহজ, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ হবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়ায় একজ ব্যবসায়ী বলেন”বহু দিন ধরে ট্রেন থামানোর জন্য আবেদন করে আসছিলাম। অবশেষে আমাদের দাবি পূরণ হলো। এখন ঢাকায় ব্যবসার কাজে যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে গেল।”
শিক্ষার্থী তার প্রতিক্রিয়া বলেন “আগে ঢাকায় যেতে অন্য স্টেশনে যেতে হতো। এত কষ্ট করে যাতায়াত করতাম! এখন রাতের ট্রেনে সহজেই ঢাকা পৌঁছানো যাবে। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় সুখবর।”
মহিমাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সোহাগ খান বলেন— “এটি শুধু মহিমাগঞ্জ নয়, গোটা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার জন্যই ঐতিহাসিক এক অর্জন। এতদিন এই অঞ্চলের মানুষ রেলপথে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য নানা সমস্যার সম্মুখীন হতেন। এখন থেকে তারা সহজেই আন্তঃনগর ট্রেনের সুবিধা পাবেন। এটি অর্থনীতি, শিক্ষা ও সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”