সারাদেশ

জন্ম নিবন্ধন লাগে গরু-মহিষেরও

বাড়িতে নতুন গরু-মহিষের বাচ্চার জন্ম হলেই যেতে হবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্ত ফাঁড়িতে। সেখানে বিজিবির খাতায় গরু-মহিষ জন্মের তথ্য নিবন্ধন করে আসতে হবে। শিশু জন্মের পর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে যেমন জন্ম নিবন্ধন করতে হয়, তেমনি গরু-মহিষের জন্মের পরও রাজশাহীর সীমান্ত এলাকায় বিজিবির কাছে ‘জন্ম নিবন্ধন’ করাতে হয়।

বাড়িতে গরু-মহিষ মারা গেলে কিংবা বিক্রি করতে চাইলেও তা খাতায় লিখতে হয়। একটি খাতা থাকে বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়িতে, আরেকটি থাকে মালিকের কাছে। দুই খাতার তথ্য এক হলেই গরু-মহিষের নিজ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় সীমান্ত এলাকার মানুষদের।

সীমান্ত এলাকার লোকজন বলছেন, এই খাতা হলো দলিলের মতো। গরু-মহিষ বেচতে হলেও দলিলের মতো এটা লাগে।

বিজিবি বলছে, সীমান্ত এলাকা দিয়ে আগে প্রচুর গরু-মহিষ আসতো ভারত থেকে। চোরাপথে গরু-মহিষ আনতে গিয়ে অনেকের প্রাণহানিও ঘটতো। সীমান্ত পার করে আনা গরু-মহিষ গ্রামের কোনো বাড়িতে ঢুকিয়ে নিলেই তা আর ধরার উপায় থাকতো না। এই কারণে প্রায় ১০ বছর আগে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে গরু-মহিষের তথ্য লিখে রাখা হয়। ফলে সহজেই জানা যায়, কোনো কৃষকের বাড়িতে তার নিজের কতটি গরু কিংবা মহিষ আছে।

রাজশাহী শহরের ওপারে পবা উপজেলার মাজারদিয়াড় গ্রাম। গ্রামটির সবার বাড়িতে বাড়িতে গরু-মহিষ আছে। আছে একটি করে খাতাও। গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলামের দুটি মহিষের তথ্যও খাতায় লেখা।

রেজাউল বলেন, ‘প্রশাসন ভাবে যে ভারত থেকে গরু-মহিষ এনে বিক্রি করে। তাই বাড়ির গরু-মহিষের কথা খাতায় লিখে রাখতে হয়। নতুন বাচ্চা হলে ক্যাম্পে গিয়ে খাতায় তুলে নিয়ে আসতে হবে। বিক্রি করলেও খাতা থেকে কেটে নিয়ে আসতে হবে। এতে প্রশাসন বুঝবে আমার খুঁটিতে কয়টা গরু-মহিষ আছে। আগে তো বাড়ির গরু-মহিষ বিক্রি করতে গেলেও ধরতো। এখন আর ধরে না।’

ভারত সীমান্ত লাগোয়া এ গ্রামে বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ির পাশেই কৃষক মো. মন্টুর বাড়ি। তিনি বাড়ি থেকে খাতা বের করে এনে দেখালেন। তিনি বললেন, ‘এইডা বর্ডার জাগা তো, খাতা না করলে হবে না। এডা দলিলের মতো। গরু-মোষ বেচতে গেলেও এডা লাগবে। হয়তো গরু-মোষ নিয়া যাতে-আসতে হয়তো বিডিআর-প্রশাসনের লোক বাধাটাধা দিবে। কাজেই এইডা খাতায় লেখতে হবে। বিককিরি করলে খাতা লাগবে, বাচ্ছা হলেও খাতায় তুল্যা নিতে হবে। কিন্যা আনলেও আমাকে খাতা করা লাগবে।’

মাজারদিয়া গ্রামের ময়নুল হাসান লিটনের বাড়ি থেকে সামান্য দূরেই ভারতের সীমান্ত। লিটনের বাড়িতে এখন দুটি গরু আছে। স্ত্রী নিলুফা খাতুন তাদের খাতা বের করে এনে দেখালেন। দেখা গেল, ‘গরুর বাচ্চা হলে খাতায় লেখা হয়েছে। আবার বিক্রি করার তথ্যও লেখা। তারিখ বসিয়ে সেখানে সিল-সই দিয়েছেন বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ির কর্মকর্তা।’

নিলুফা বলেন, ‘এই খাতার উপকারিতা অনেক। আগে তো বাড়ির গরু-মহিষ হাটে তুলতে গেলেও পথে আটকাতো প্রশাসন। এই গরু কার, কোথা থেকে এলো নানান প্রশ্ন। এখন খাতা দেখালেই হলো। ওপারে গরু নিতে হলে খাতা দরকার। তা না হলে গরু-মহিষ পারে নেওয়া যাবে না। এই খাতার কারণে এখন গ্রামের গরু-মহিষ চুরি-ডাকাতিও হয় না। চোরের চুরি করে লাভ হবে না, চোরেরা চুরি করলে ওদের তো খাতা থাকবে না।’

বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘রাজশাহীর প্রতিটি সীমান্তের গ্রামেই এই খাতার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বোঝা যায় কার বাড়িতে কয়টি গরু-মহিষ আছে। এই খাতার কারণে সীমান্ত দিয়ে গরু-মহিষ আসছে না। কৃষক বিক্রি করেও গরু-মহিষের ভালো দাম পাচ্ছেন। আবার সীমান্তে গরু-মহিষ পাচার বন্ধ হওয়ায় সীমান্তের মৃত্যুও কমেছে। খাতার কারণে চোরও গরু-মহিষ চুরি করে না। এর নানারকম উপকারিতা আছে।’


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker